পাতা:মানসী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৬৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মরণস্বপ্ন
৬৩

দীর্ঘ তীক্ষ্ণ হই ক্রমে তীব্র গতিবলে
ব্যগ্রগামী ঝটিকার আর্তস্বরসম—
সূক্ষ্ম বাণ সূচিমুখ  অনন্ত কালের বুক
বিদীর্ণ করিয়া যেন চলে।
রেখা হয়ে মিশে আসে দেহমন মম।

ক্রমে মিলাইয়া গেল সময়ের সীমা,
অনন্তে মুহূর্তে কিছু ভেদ নাহি আর।
ব্যাপ্তিহারা শুন্যসিন্ধু  শুধু যেন এক বিন্দু
গাঢ়তম অন্তিম কালিমা—
আমারে গ্রাসিল সেই বিন্দুপারাবার।

অন্ধকারহীন হয়ে গেল অন্ধকার—
‘আমি’ বলে কেহ নাই, তবু যেন আছে।
অচৈতন্যতলে অন্ধ  চৈতন্য হইল বন্ধ,
রহিল প্রতীক্ষা করি কার!
মৃত হয়ে প্রাণ যেন চিরকাল বাঁচে।

নয়ন মেলিনু, সেই বহিছে জাহ্নবী—
পশ্চিমে গৃহের মুখে চলেছে তরণী।
তীরে কুটিরের তলে  স্তিমিত প্রদীপ জলে,
শূন্যে চাঁদ সুধামুখচ্ছবি।
সুপ্ত জীব কোলে লয়ে জাগ্রত ধরণী।

১৭ বৈশাখ ১৮৮৮