পাতা:মানসী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

সূচনা[১]

বাল্যকাল থেকে পশ্চিমভারত আমার কাছে রোম্যাণ্টিক কল্পনার বিষয় ছিল। এইখানেই নিরবচ্ছিন্নকাল বিদেশীয়দের সঙ্গে এ দেশের সংযোগ ও সংঘর্ষ ঘটে এসেছে। বহু শতাব্দী ধরে এইখানেই ইতিহাসের বিপুল পটভূমিকায় বহু সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন এবং নব নব ঐশ্বর্যের বিকাশ ও বিলয় আপন বিচিত্র বর্ণের ছবির ধারা অঙ্কিত করে চলেছে। অনেক দিন ইচ্ছা করেছি, এই পশ্চিমভারতের কোনো এক জায়গায় আশ্রয় নিয়ে ভারতবর্ষের বিরাট বিক্ষুব্ধ অতীতযুগের স্পর্শলাভ করব মনের মধ্যে। অবশেষে এক সময়ে যাত্রার জন্যে প্রস্তুত হলুম। এত দেশ থাকতে কেন যে গাজিপুর বেছে নিয়েছিলুম তার দুটো কারণ আছে। শুনেছিলুম গাজিপুরে আছে গোলাপের ক্ষেত। আমি যেন মনের মধ্যে গোলাপবিলাসী সিরাজের ছবি একে নিয়েছিলুম। তারই মোহ আমাকে প্রবলভাবে টেনেছিল। সেখানে গিয়ে দেখলুম, ব্যাবসাদারের গোলাপের ক্ষেত, এখানে বুলবুলের আমন্ত্রণ নেই, কবির ও নেই; হারিয়ে গেল সেই ছবি। অপর পক্ষে, গাজিপুরে মহিমান্বিত প্রাচীন ইতিহাসের স্বাক্ষর কোথাও বড়ো রেখায় ছাপ দেয় নি। আমার চোখে এর চেহারা ঠেকল সাদা-কাপড়-পরা বিধবার মতো, সেও কোনো বড়ো ঘরের ঘরনী নয়।

 তবু গাজিপুরেই রয়ে গেলুম, তার একটা কারণ, এখানে ছিলেন আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় গগনচন্দ্র রায়, আফিম-

  1. দ্বিতীয় খণ্ড। রবীন্দ্র-রচনাবলী