পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বৃহত্তর—মহত্তর

আমাদের পাড়া থেকে উঠে যাওয়ার তিন বছর পরে একদিন নগেনের সঙ্গে পথে দেখা হল। লোকটার চেহারার না হোক, পোশাকের খুব উন্নতি হয়েছে দেখলাম। মাথায় চকচকে টেরি, গায়ে সিল্কের পাঞ্জাবি, পরনে কোঁচানো শান্তিপুরে ধুতি, পায়ে চকচকে ডার্বি। হাতে আবার একটা রিস্টওয়াচ বাঁধা!

 একগাল হেসে পরমাত্মীয়ের মত বলল, রেস্টুর‍্যাণ্টে ঢুক্‌তে যাচ্ছিলাম, পকেটে হাত দিয়ে দেখি মানিব্যাগটা ভুলে এসেছি। এমন খিদে পেয়েছে ভায়া!

 আশেপাশে শুধু দেশী খাবারের দোকান ছিল; বললাম, খাবার খাবেন?

 অগত্যা! ব’লে সে একটা বিড়ি ধরাল। সঙ্গে করে তাকে খাবারের দোকানে নিয়ে গিয়ে বসালাম। সে নিজেই এটা-ওটা ফরমাশ করল, আমি তাড়াতাড়ি পকেটে হাত দিয়ে টাকা তিনটে আর একবার গুণে নিলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, দিদি কেমন আছে?

 জানি না, বলে সে একটা রসগোল্লা গিলে ফেলল।

 জানেন না, মানে?

 মানে, আমায় কলা দেখিয়ে শালী ভেগেছে চার মাস!

 আমি নীরবে উঠে দাঁড়ালাম। যাবার জন্য পা বাড়াতেই সে ব্যাকুল হয়ে বললে, চললেন যে?

 সে কৈফিয়াতে আপনার প্রয়োজন?

 এহেঃ, চটেন কেন! খাবারের দামটা দিয়ে যান। আমার কাছে একটাও পয়সা নেই। মাইরি বলছি। কালীর দিব্যি।

 দাম? দাম আমি জানি না, বলে পা বাড়ালাম।

 সে উঠে এসে কাঁদকাঁদ হয়ে বলল, এ কোন দেশী ঠাট্টা ভাই? বিপদে ফেলে পালাতে চান কি রকম? প্রতিজ্ঞা করছি আর খারাপ কথা বলব না। খুব সম্মা করে কথা কইব। কি জ্বালা, আপনার গায়ে পড়চি দাদা, হল?

 আমি ফিরলাম। সে আবার খেতে আরম্ভ করে অনুযোগের সুরে বললে,