পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হলুদ পোড়া Sto তিনদিন আগে বলাই চক্রবর্তী মরে গিয়েছিল সন্দেহ নেই, কিন্তু শুধু জ্যান্ত মানুষ কি মানুষের গলা টিপে মারে ? আর কিছু মারে না ? শ্মশানে-মশানে দিনক্ষণ প্ৰভৃতির যোগাযোগ ঘটলে পথ-ভোলা পথিকের ঘাড় তবে মাঝে মাঝে মটকে দেয় কিসে ! ব্যাখ্যাটা দেওয়া উচিত ছিল কুঞ্জ গুণীর। বুড়ো ঘোষাল আগেই সকলকে শুনিয়ে দেওয়াতে জোর গলায় তাকে সমর্থন করেই নিজের মৰ্যাদা বঁাচানো ছাড়া তার উপায় রইল না। তবে কথাটাকে সে ঘুরিয়ে দিল একটু অন্যভাবে, যার ফলে অবিশ্বাসীর মনে পর্যন্ত খটকা বাধা সম্ভব হয়ে উঠল। বলাই চক্রবর্তই শুভ্রাকে খুন করেছে বটে, কিন্তু সোজাসুজি নিজে নয়। কারণ, মরার এক বছরের মধ্যে সেটা কেউ পারে না, ওই সময়ের মধ্যে শ্ৰাদ্ধ-শান্তি না হলে তবেই সোজাসুজি মানুষের ক্ষতি করার ক্ষমতা জন্মায়। বলাই চক্রবর্তী একজনকে ভর করে তার মধ্যস্থতায় শুভ্রাকে খুন করেছে, তার রক্তমাংসের হাত দিয়ে। না, যাকে সে ভর করেছিল তার কিছু মনে নেই। মনে কি থাকে ! এক রাত্রে অনেক কান ঘুরে পরদিন সকালে এই কথাগুলি ধীরেনের কানে গেল। অগ্রহায়ণের উজ্জল মিঠে রোদ তখন চারিদিকে ছড়িয়ে আছে, বর্ষার পরিপুষ্ট গাছে আর আগাছার জঙ্গলে যেন পার্থিব জীবনের ছড়াছড়ি। বাড়ির পিছনে ডোবােট কচুরিপানায় আচ্ছন্ন, গাঢ় সবুজ অসংখ্য রসালে পাতা, বর্ণনাতীত কোমল রঙের অপরূপ ফুল। তালগাছের গুড়ির ঘাড়টি কাৰ্তিক মাসেও প্ৰায় জলে ডুবে ছিল, এখন জল কমে অর্ধেকের বেশী ভেসে উঠেছে। টুকরো বসিয়ে ধাপগুলি এবার ধীরেন। বিশেষ করে শুভ্ৰার জন্য বানিয়ে দিয়েছিল, সাত মাসের গর্ভ নিয়ে ঘাটে উঠতে নামতে সে যাতে পা পিছলে আছাড়ি না খায়। পাড়ার মানুষ বাড়ি ব’য়ে গায়ের গুজব শুনিয়ে গেল, আবেষ্টনীর প্রভাবে উদ্ভট কথাগুলি সঙ্গে সঙ্গে ধীরেনের মন থেকে বাতিল হয়ে গেল। ক্ষুব্ধ হবার অবসরও সে পেল না। ডোবার কোনদিক থেকে কি ভাবে কে সেদিন সন্ধ্যায় ঘাটে এসেছিল, কেন এসেছিল, এই পুরনো ভাবনা সে ভাবছিল অনেকক্ষণ থেকে। তাই সে ভাবতে লাগল। একমাত্র এই ভাবনা তাকে অন্যমনস্ক করে দেয়। ক্ষোভ ও বিষাদের তার এত প্ৰাচুৰ্য এখন যে মাঝে মাঝে কিছুক্ষণের জন্য অন্যমনস্ক হতে না পারলে তার অসহ্য কষ্ট হয় । অন্য কোন বিষয়ে তার মন বসে না । ভাতের থালা সামনে ধরে দিয়ে শাস্তি বলল, “আমার কিন্তু মনে হয় তাই হবে। নইলে--” e -fistfia vs o