পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S७०8 হলুদ পোড়া কটমট করে তাকিয়ে ধীরেন। ধমক দিয়ে বলল, চুপ। যা খুনী মনে হোক তোমার, আমায় কিছু বলবে না। খপর্দার।” স্কুলে যাওয়ার পথে যাদের সঙ্গে দেখা হল মুখে তারা কিছু বলল না, কিন্তু তাদের তাকানোর ভঙ্গী যেন আরও স্পষ্ট জিজ্ঞাসা হয়ে উঠলঃ কথাটা তুমি কি ভাবে নিয়েছ। শুনি ? পুরুতষ্ঠাকুর তাকে অনেকক্ষণ দাড় করিয়ে রেখে দোষমোচনের জন্য দরকারী ক্রিয়াকর্মের বিষয় আলোচনা করলেন, উপদেশ দিলেন, বিশেষ করে বলে দিলেন যে স্কুল থেকে ফিরবার সময় তার বাড়ি থেকে সে যেন তার নিজের ও বাড়ির সকলের ধারণের জন্য মাদুলি নিয়ে যায়। স্কুলে পা দেওয়ার পর থেকে ধীরেনের মনে হতে লাগল, সে যেন বাইরের কোন বিশিষ্ট অভ্যাগত স্কুল পরিদর্শন করতে এসেছে, তার সাত বছরের অভ্যন্ত অস্তিত্বকে আজ এক মুহুর্তের জন্য কেউ ভুলতে পারছে না। প্ৰথম ঘণ্টাতেই ক্লাস ছিল। অর্ধেক ছেলে আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে, বাকী অর্ধেক নিজেদের মধ্যে গুজগাজ ফিসফাস করছে। নিজেকে জীবন্ত ব্যঙ্গের মত মনে হচ্ছিল। বইয়ের পাতায় চোখ রেখে ধীরেন পড়াতে লাগল। চোখ তুলে ছেলেদের দিকে তাকাতে পারল না । ঘণ্টা কাবার হতেই হেডমাস্টার ডেকে পাঠালেন । “তুমি একমাসের ছুটি নাও ধীরেন।” “এক মাসের ছুটি ? ‘মথুরবাবু এইমাত্র বলে গেলেন। আজ থেকেই ছুটি পাবে, আজ আর তোমার পড়িয়ে কাজ নেই।” মথুরবাবু স্কুলের সেক্রেটারী। মাইল খানেক পথ হাঁটলেই তার বাড়ি পাওয়া যায়। চলতে চলতে মাঝপথে ধীরেনের মাথাটা কেমন ঘুরে উঠল। ক'দিন থেকে হঠাৎ চেতনায় ঝাকি লেগে মাথাটা তার এই রকম ঘুরে উঠছে। চিন্তা ও অনুভূতির আকস্মিক পরিবর্তনের সঙ্গে এই ঝাকি লাগে। অথবা এমনি ঝাকি লেগে তার চিন্তা ও অনুভূতি বদলে যায়। গাছতলায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে সে বাড়ির দিকে পা বাড়াল। মথুরবাবু এখন হয়ত খেয়েদেয়ে বিশ্রাম করছেন, এখন তঁাকে বিরক্ত করা উচিত হবে না। স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি, এক মাসের ছুটি দেওয়া হয়েছে। এক মাসের মধ্যে মথুরবাবুর সঙ্গে দেখা করার অনেক সময় সে পাবে। আজ গিয়ে হাতে-পায়ে । o Tifüs Krototitsa o