পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হলুদ পোড়া SO “ঘরে আসবে না ?” তখনো আকাশ থেকে আলোর শেষ আভাসটুকু মুছে যায়নি। দু’তিনটি তারা দেখা দিয়েছে, আরও কয়েকটি দেখা দিতে দিতে আবার হারিয়ে যাচ্ছে । আর এক মিনিট কি দু’মিনিটের মধ্যে রাত্রি শুরু হয়ে যাবে। জীবিতের সঙ্গে মৃতের সংযোগ স্থাপনের সবচেয়ে প্রশস্ত সময় সন্ধ্যা ! - ভগ্ন-সন্ধ্যাবেল শুভ্ৰা দামিনীকে আশ্রয় করেছিল। আজ সন্ধ্যা পার হলে রাত্রি আরম্ভ হয়ে গেলে চেষ্টা করেও শুভ্ৰা হয়ত তার সঙ্গে কথা বলতে পারবে না । আর দেরি না করে এখুনি শুভ্ৰাকে সুযোগ দেওয়া উচিত। চোরের মত ভিটে থেকে নেমে বঁাশ ডিঙিয়ে ধীরেন। পা টিপৌটিপে ডোবার মাঠের দিকে এগিয়ে গেল । অদ্ভুত বিকৃত গলার ডাক শুনে শান্তি লণ্ঠন হাতে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। বঁশের ওপারে দাড়িয়ে হিংস্ৰ জন্তুর চাপ-গৰ্জনের মত গম্ভীর আওয়াজে ধীরেন তার নিজের নাম ধরে ডাকাডাকি করছে। গেঞ্জি আর কাপড়ে কাদা ও রক্ত মাখ। ঠোঁট থেকে চিবুক বেয়ে ফোটা ফোটা রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ‘বাশটা সরিয়ে দাও।” “ডিঙিয়ে এসো ! বঁাশ ডিঙিয়ে চলে এসো ! কি হয়েছে ? পড়ে গেছ নাকি ?” “ডিঙোতে পারছি না। বঁাশ সরিয়ে দাও।” বঁাশ ডিঙোতে পারছে না ! মাটিতে শোয়ানো বঁাশ! শান্তির আর এতটুকু সন্দেহ রইল না । আকাশ-চেরা তীক্ষুগলায় সে আর্তনাদের পর আর্তনাদ শুরু করে দিল । তারপর প্রতিবেশী এল, পাড়ার লোক এল, গায়ের লোক এল। কুঞ্জও এল । তিন চার কলস জল ঢেলে ধীরেনকে স্নান করিয়ে দাওয়ার খুঁটির সঙ্গে তাকে বেঁধে ফেলা হল। মন্ত্র পড়ে, জল ছিটিয়ে, মালসার আগুনে পাতা ও শিকড় পুড়িয়ে ঘণ্টা খানেকের চেষ্টায় ধীরেনকে কুঞ্জ নিঝুম করে ফেলল। তারপর মালসার আগুনে কঁচা হলুদ পুড়িয়ে ধীরেনের নাকের কাছে ধরে বজ্ৰকণ্ঠে সে জিজ্ঞাসা করল, ‘কে তুই ? বল তুই কে ?” ধীরেন বলল, “আমি বলাই চক্রবর্তী ! শুভ্রাকে আমি খুন করেছি।” o स्व-निदीठि १छ o