পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চুরি চুরি খেলা S30 তার চোখের সামনে কমলার দিকে চাহিয়া উদ্ধত হাসি হাসিবার পর এই সকরুণ বিনয় প্রকাশে অনন্তের মুখ আরও বিবৰ্ণ হইয়া গেল। বলিল, সুশীলের অস্থখ শুনলাম সামান্য অসুখ । আমি কাছে থাকলে বিরক্ত হয়ে ওঠেন। সারাদিন আজ কবিতা লিখেছেন সামান্য কয়েকটি কথার কৈফিয়ত ও অনুনয়ের কি অপূর্ব সমন্বয়। অনন্ত যেন হতাশ হইয়া গেল,-কবিতা ? হঁ্যা। লিখবার সময় ওকে দেখলে আমার এমন ভয় করে ! চোখ রক্তবর্ণ, কপালে একটা শিরা দপদপ করছে জরের জন্য বোধ হয়। মাধুরী মানভাবে হাসিল, হবে। কিন্তু আমার ভয় করে।-কোথায় বসবেন ? লাইব্রেরীতে। অনন্ত চিন্তিত মুখে লাইব্রেরীতে গিয়া বসিল। একটা প্লেটে একটিমাত্ৰ সন্দেশ আনিয়া কাগজপত্র সরাইয়া টেবিলে নামাইয়া রাখিয়া মাধুরী বলিল, করেছি বোধ হয়। পঞ্চাশটা, খাবেন মোটে একটা । বেশী খেলে তুমি খুশী হবে ? মাধুরী মানমুখে বলিল, হ’তাম, বেশী খেলে যদি আপনার শরীর খারাপ হওয়ার ভয় না থাকত । একটু একটু করিয়া ভাঙিয়া সন্দেশটা খাইয়া অনন্ত বলিল, জীবনটা দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে মাধুরী। স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় কথা ওঠার পরেই জীবন সম্বন্ধে তার এই আকস্মিক মন্তব্যে মাধুরী একটু বিস্মিত হইল। মৃদুস্বরে বলিল, জীবন দুর্বোধ্য বইকি। একচুমুক জল পান করিয়া অনন্ত বলিল, শুধু অসামঞ্জস্য, কেবল খাপছাড়া বিধান। উচিত অনুচিতে এতটুকু মিল নেই। প্ৰমাণ দ্যাখো, শরীরে স্বাস্থ্য নেই, তোমার তৈরী সন্দেশ একটার বেশী খেতে পারিনা, মনে শক্তি নেই, সামান্য উত্তেজনার সূত্রপাতে আতঙ্ক হয়। তবু ত জীবন আমার নিঃস্ব নয়। নয় ? মাধুরীর কণ্ঠস্বর যেন অনুযোগ করিল, আপনি ত উদাসীন, সন্ন্যাসী । অনন্ত করুণভাবে হাসিয়া বলিল, উদাসীন নাই, ভীরু ; সন্ন্যাসী নই, দুর্বল ॥৮ O v-fifts a