পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*ţi S9 আসর করা হইয়াছিল উঠানে, সন্ধ্যাবেল সেখানে মানুষ আর আঁটে না। কৃষ্ণলীলার অনেক গান সুভদ্ৰা জানিত, একাই সে তিনঘণ্টা আসার জমাইয়া রাখিল। অনেকদিন এ সব গান সে গায় নাই, একটু ভয় তার ছিল গানগুলি ঠিকভাবে গাহিতে পরিবে কিনা। কিন্তু আরম্ভ করা মাত্র আগের মতই গানের মোহ কখন যে তাকে মাতাল করিয়া পৃথিবী ভুলাইয়া দিল। এ বাড়ির একজন ভাড়াটে গিরীন সাউ। চমৎকার বেহালা বাজায়, হারমোনিয়াম আর তবলা বাজানোর লোকও সেই সংগ্ৰহ করিয়া আনিয়াছিল। সুভদ্ৰা ভাবিয়ছিল, শুধু বসিয়া থাকিয়াই গানগুলি গাহিয়া যাইবে । কিন্তু প্ৰথম গানের অর্ধেকটাও বসিয়া বসিয়া গাওয়া চলিল না। রাধার কাছে যাওয়ার সময় পথে চন্দ্রাবলী তাকে ধরিয়া নিজের কুঞ্জে টানিয়া আনিয়াছে, রাধার জন্য মন আকুল হইয়া আছে কিন্তু বাহিরে সে চতুরালি করিতেছে চন্দ্রাবলীর সঙ্গে, উঠিয়া দাড়াইয়া ঘুরিয়া ফিরিয়া প্ৰত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাহায্য ছাড়া এ কি প্ৰকাশ করা যায় ? একটি হাটু পাতিয়া বসিয়া সামনে ঝুকিয়া পায়ে না। ধরিলে কি খণ্ডিতা রাধার কাছে নিবেদন করা যায়, হৃদয়ে যার শুধু রাধার চিহ্ন আঁকা বাহিরের অঙ্গে তুচ্ছ নখচিহ্ন দেখিয়া তার উপর রাগ করা রাধারা উচিত নয় ? গানের শেষে সুভদ্রা ঘরে গিয়া শুইয়া পড়িল । সাধন ঘরে গেল অনেক পরে। খোলা দরজার বাহিরে তখনও মানুষকে চলাফেরা করিতে দেখা যাইতেছে, কলরব শোনা যাইতেছে। সাধন ঘরে আসিবামাত্র সুভদ্ৰা বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া তার সামনে এক হাঁটু মাটিতে নামাইয়া সামনে ঝুকিয়া দু’হাতে তার পা ধরিয়া বলিতে লাগিল, ‘সত্যি বলছি আমি, তুমি ছাড়া আমি কাউকে জানি না। কোন দিন কোন পরী-পুরুষের দিকে আমি তাকাই নি-” সাধন। তার গালে টোকা দিয়া বলিল, ‘সত্যি ? সুভদ্ৰা কাতর হইয়া বলিল, “কেন সন্দেহ করছ? রসিককে যে মাঝে মাঝে আসতে দিতাম তাও ত তোমার জন্যেই ? মাইরি বলছি, যখন আর সইতে পারতাম না, মনে হত। আর একটু’খন তোমায় না পেলে বুক ফেটে যাবে, শুধু তখন একটু সময়ের জন্যে বিছানায় গিয়া এলাইয়া পড়িয়া বলিল, উঃ, মাগো ! আমি আর বঁচিব না।’ বেহালা-বাদক গিরীন সাউ-এর বৌ কালিদাসী আসিয়া বলিল, “খাবে না। বঙুম দিদি ? কি গানটাই গাইলে বধুম দিদি।” © घ-निदीङि१छ o