পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

፵iማ 8 ܗ ܓ গোলার ধান কোথা গেল ? মোরা কিনতে এয়েছি। ধান । ধান নেই, বেচে দিয়েছি। কাকে বেচলে ? কখন বেচলে ? জগৎ কুণ্ডুকে বেচে দিয়েছি। রাত্রে ধান নিয়ে গেছে। বেচে দিয়েছ! গায়ের লোক না খেয়ে মরছে, তুমি ধান বেচে দিয়েছা! জানালার পাট ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয় বড় ছেলে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে জানালা নয়, দরজাই খুলে দিতে হয় পরাণ ভৌমিক আর সোনা মণ্ডলকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়ার জন্য। রাতারাতি পাচশ’ মণ ধান সরিয়ে নিয়ে গেছে সাতকুঁড়ার জগৎ কুণ্ডু, কিন্তু গায়ের লোক কেউ টের পায়নি, এটা সহজে বিশ্বাস করতে চায়নি তারা। দালানের তিনটে কোঠা খুজে দেখার দাবি করেছে। শুধু দু’জন ভেতরে আসবে এই শর্তে দরজা খুলেও দিতে হয়েছে। ঘরে ফিরে পাঁচু কাপড়ে বাধা আধ-সেদ্ধ ভেজা চালগুলি টুকরিতে ঢেলে রাখে। বুচি খুশী হয়ে বলে, আ মার! কোথাকার কুডোনো চাল ? পাঁচু হাসে। উনান থেকে ভাতের হাড়ি নামিয়ে রেখে দালানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল হালদারের বড় বেী, হাড়ি থেকে আধ-সেদ্ধ চালগুলি পাচু ছেকে তুলে কেঁচড়ে বেঁধে এনেছে । গভীর রাত্রে লরী এসেছিল জগৎ কুণ্ডুর, দশজন লোক নিয়ে। সরকারী রাস্তায় থেমেছিল লরী। ইঞ্জিন না চালিয়ে নিঃশবেঙ্গ লরীটা ঠেলে আনা হয়েছিল হালদারের বাডির কাছে, হাতে হাতে গোলাব ধান কিছুক্ষণের মধ্যে উঠে এসেছিল লরীতে, আবার ঠেলে লরী নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বড় রাস্তায়। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে কতবার এসেছে লব্রীট, ধান-চাল নিয়ে গেছে গায়ের লোকের চোখের সামনে দিয়ে, তখনো মরিয়া হয়ে ওঠেনি গায়ের লোক পেটের জ্বালায়। লরীর চাকার অনেক দাগের সঙ্গে মিশে গিয়েছে গতরাত্রির আনাগোনার নতুন দাগ । জগৎ কুণ্ডুর তিনটে আড়ত, একটা গাঁয়ে, একটা নদীপুরে, একটা সদরে। তার কোনটাতেই যায়নি ধান নিয়ে লৱীটা, বড় সড়ক ধরে ক্রোশ দুই নদীপুরের দিকে • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৩