পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ye p বৃহত্তর-মহত্তর বঁাক, সে পৰ্যন্ত আমি নৌকার জননীটিকে অনুসরণ করলাম। ততক্ষণ কাছের জননী শান্ত হয়েছে । বললাম, এভাবে চরমেউঠলে আমাদের আলোচনা আপনা থেকে বন্ধ হয়ে যাবে। সে মান হেসে বলল, চরম কীর্তির আলোচনায় চরমে না উঠে উপায় ? বললাম, তুমি শুধু ইঙ্গিত কর, বাকীটা আমি অনুমান করব। নরকের অন্ধকার আর স্বর্গের জ্যোতি টেনে আনলে দুটোই চোখকে খোচা দেবে, অসুস্থ করবে। আমরা পৃথিবীর মানুষ, আমাদের মাঝামাঝি রফা হওয়াই ভাল। ভীরু ! ব’লে সে হাসবার চেষ্টা করলে । আমি বললাম, নিঃসন্দেহ। কিন্তু আর সমালোচনা নয়। যত রেখে-ঢেকেই বল অপমানিত হব। তোমার কথাই হোক। তুমি য়া বললে তাতে একটা প্ৰকাণ্ড মুশকিল আছে। বোধ হয় সে মুশকিলের অবসানও নেই। कि भूलक्लि ? আমার মত ভীরু অকৰ্মণ্য থেকে আরম্ভ করে তোমার ছেলেদের মত চোর ছ্যাচোড়কে জন্ম দিতে সবাই যদি তোমার মত অস্বীকার করে, দেশের সুতিকাঘরের সাড়ে তিন দিকের দেয়াল ভেঙে পড়বে। দেশটা তখন জন্মাবে কোথায় ? জন্মাবে না ! শুনে আমি থ বনে গেলাম। সে বলল, ভড়কে গেলে দেখচি। দুর্ভাবনার কারণ নেই। দেশের সুতিকাঘরের সাড়ে তিন দিকের দেয়াল কি আমার মত মায়েরা ? দেশ কি জন্মায় কেরানী আর অপদার্থ ধনীর ঘরে ? শহরের বিষপান ক’রে যে কটি মানুষ জ্ঞান হারিয়েচে তাদের বাড়িতে ? কলকাতাতেই অগুনতি ডালিম বেদানা-আইন করে তাদের সকলকে হত্যা করলে কলকাতার নারী-সমাজের কি আসবে-যাবে ? বরং লাভ হবে-ক্ষতি নয়। আমার মত মায়ের মা হতে অস্বীকার করলে সুতিকাঘরের অনাবশ্যক ভিড় কমবে, দেশের উপকার হবে। গান্ধারীর সংযমে কুরুক্ষেত্রের কলঙ্ক রদ হবে। ঘরের মানুষের সঙ্গে লড়াই করে ধর্মকর্মের শক্তিক্ষয় হবে না। ;-জগতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ধর্ম জগতে ছড়িয়ে পড়ার সময় পাবে, জগতের মধ্যে শ্ৰেষ্ঠ কমী জগতের স্বাধীনতা মুহুর্তে অর্জন করবে। দুৰ্যোধনকে মজুত রাখতেই যুধিষ্ঠির আর অজুনের সময় ও শক্তি ব্যয়িত হলে গান্ধারীর কি লজ্জা ভাই ? সহজ লজ্জায় কি মা হয়ে ছেলেকে বলেছিল, তোমার নয়, ধর্মের জয় হোক ।

  • কানিক বন্ধ্যোপাধ্যায়ের •