পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RR নেকী অশোক বললে, পরশু তুমি বাড়ি ছিলে না, দুপুর বেলা বই হাতে করে এসে হাজির। যেমনি বলেছি মা বাড়ি নেই, বিকেলে আসবেন, যা মুখে এল বলে ୭୪ଟି (୩୩) ! সবটুকু দোষ অশোক নির্বিকারে নেকীর ঘাড়েই চাপিয়ে দিল। এমনি মানুষ নিজের অন্যায় করার জালার সান্তুনা খোজে। বেদনা দেওয়া সহজ, আঘাত করা ততোধিক! কিন্তু আমন একটা সহজ কাজ করেও সুখ মেলে না। সুন্দরী এবং তরুণী, তার হাসিভরা মুখখানি যে কথার আঘাতে মান করে দিয়েছিল, এই স্মৃতিটা কঁাটার মত ক্রমাগত বিধে চলে । মা বললেন, কি ছেলেমানুষি যে তোরা করছিস অশোক। নেকী ত গায়ে । পড়ে ঝগড়া করার মেয়ে নয় । না। খুব ভাল মেয়ে! রোদ পড়ে এলে পুলককে নিয়ে অশোক বেড়াতে বার হল। আমবাগানের পরেই বিস্তৃত মাঠ, আলে আলে পায়ে পায়ে গড়ে ওঠা সরু পথটি দিয়ে চলতে তার এমনি ভাল লাগে ! মাঝে মাঝে লাঙল দেওয়া ক্ষেতে নেমে পড়ে, মাটির ঢেলাগুলি পায়ের নীচে ওঁড়িয়ে যায়। ক্ষেতগুলি সমস্তদিন বৈশাখের বেহিসাবী সুৰ্যের তাপ চুরি করে সঞ্চিত করে রাখে, সুৰ্য বিদায় নিলে মৃদুভাবে সেই তাপ বিকীর্ণ করে। অশোক সৰ্বাঙ্গ দিয়ে সেটুকু অনুভব করে। চযা মাটির অস্পষ্ট সুবাস তার মনকে উদাস করে দেয়। পুলিকের হাত ধরে চলতে চলতে অশোক ভাবে, এমনি ভাবেই মাটি যেন নিজেকে চিনিয়ে দিতে চায়। নিশ্চল জড় যেন বলতে চায়, সারা জগতের জীবনের রস যোগাই আমি, আমায় চিনে রাখো । মাঠের পরে বাড়ি থেকে মাইল খানেক তফাতে ছোট একটা নদী, এখন শ্ৰোত নেই। স্থানে স্থানে জল জমে আছে, বাকীটুকু বালিতে বোঝাই। সাদা ধবধবে বালি। এককালে স্রোতের নীচে ছিল, জলের গতি নিপুণ শিল্পীর মত অপূর্ব নক্সা একে দিয়েছে। কোথায়ও বালির বুকে ঢেউয়ের ছবির হুবহু ছাপ পড়েছে, কোথায়ও বিচিত্র রেখার সমাবেশে সূক্ষ্মী আলপনা গড়ে উঠেছে। এমনি সূক্ষ্ম এমনি কোমল যে, দেখলে মনে হয় আঁকলো কে ? অশোক নিত্য এইখানে এসে বসে। পায়ের দাগে বালির কারুকাৰ্যনিষ্ট হয়ে যায়, অশোক ব্যথিত হয়ে ওঠে । অথচ ওই কারুকাৰ্য শতকরা নিরানব্বই জনের চােখেই হয়ত পড়ে না! তুচ্ছ বলে নয়, সুন্ম সৌন্দৰ্য আবিষ্কার করবার মানুষের একটা বিপুল অক্ষমতা আছে বলে। o IF VANNyky o