পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

t e আসিয়াছে। কাদুকে তাহার টাকা দিয়া কিনিতে হইয়াছিল। টাকা দিয়া মেয়েকে রাখাল বিলাইয়া দিবে। মধু নিজেই মাথা নাড়িল। এক মুহূর্তের জন্য তার মুখের ভাব বিষয়ে ও কঙ্কণ দেখাইল । কামনা করিবার অধিকার জগতে সকলেরই আছে। কোন অবস্থাতেই কেহ নিজেকে এই অধিকার হইতে বঞ্চিতও করে না। স্নাখালের ঘুমন্ত মেয়েটার জন্য একটা প্ৰগাঢ় অস্থায়ী প্ৰেম অনুভব করিতে মধুর হৃদয় কোন বাধাই পাইল না। হৃদয়ের এই আকস্মিক আবেগসঞ্চার তাহার নূতন নয়। গহনার দোকানের সামনে দাড়াইয়া এমনি আকস্মিক হৃদয়োজ্জ্বাস সে অনুভব করিয়াছে। দোকানের সুরক্ষিত গহনাগুলিকে দুর্লভ জানিয়া সে যেমন ব্যথা পাইয়াছে, আজ তাহার এই কলঙ্কিত নিশীথ-অভিযানের উগ্ৰ ভয়কাতর উপলব্ধিগুলির মধ্যে আকাশের চাদের মত দুস্তপ্রাপ্য শিথিলবসনা মেয়েটির জন্য ক্ষণিকের নিবিড় ব্যর্থ প্ৰেমে তেমনি একটা বেদন অনুভব করিল। তাহার সাধ হইল, মেয়েটিকে একবার সে স্পর্শ করে। পরম আগ্রহে কম্পিত ব্যাকুল বাহুতে কাদুর মত ওকে একবার সজোরে বুকে চাপিয়া ধরিয়া পলাইয়া যায়। টাকা দিয়া তাহার কাজ নাই। স্বৰ্গচ্যুত অভিশপ্ত দেবতা। হঠাৎ চোখ মেলিয়া অদূরে স্বর্গের ছবি দেখিলে যেমন করিয়া অশান্ত ও বিচলিত হইয়া পড়ে, মধুর বিকৃত মন নিষ্পাপ সুন্দরী মেয়েটির একটু স্পৰ্শলাভের জন্য তেমনি ভাবে কঁাদিয়া উঠিল। মরুপথিকের সামনে এ যেন সরোবরের আবির্ভাব। মরীচিকার মত মিলাইয়া যাইবে জানিয়াই ঝাপ দেওয়ার সাধ যেন কমে না, বাড়িয়া যায়। মধু জোরে নিঃশ্বাস ফেলিল। দেবমন্দিরের বাহিরে দাড়াইয়া অশান্ত আত্মার ধূপগন্ধী বায়ুকে নিঃশ্বাসে গ্রহণ করার মত শ্বাস টানিয়া লইয়া আপনার জলসিক্ত অধউলঙ্গপ্ৰায় দেহের দিকে চাহিয়া তার চোখে জল আসিয়া পড়িল । সে যে নরকে বাস করে, আজ পর্যন্ত সে যে এক মুহুর্তের জন্য শান্তি পায় নাই, একথা হঠাৎ আবার তাহার মনে পড়িয়াছে। তার নোংরা দুৰ্গন্ধ ঘর, স্কুলাঙ্গী টাকা-দিয়া-কেনা হীনচেতা স্ত্রী, তার লোভ ও ভয়ে-ভরা একটানা অস্বাভাবিক জীবন। ভদ্রলোকে কি-ভাবে বঁাচে মধুর। তাহা অজানা নয়। সৎ ধৰ্মভীরু গৃহস্থের জীবনযাত্ৰা প্ৰণালীর সঙ্গে তার পরিচয় আছে। তেমনি একটি ঘুমন্ত পরিবারকে চোখের সামনে রাখিয়া, একটি কিশলয়ের মত কোমল কিশোরীকে ভালবাসিয়া (কয়েক মুহূর্ত পরে মধুর অনুভূতি একেবারে লোপ 8 V-fast to