পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in S O SR মানিক রচনাসমগ্ৰ স্বামী আর আত্মীয়স্বজন শ্যামার সেবা লইয়াছে। সন্তান লইয়াছে সেবা ও স্নেহ। প্রতিদানে সেবা শ্যামা চায় না। আজ শ্যামাকে কেহ একটু স্নেহ দাও? বড়েদিনের সময বিধান আসিলে সুপ্ৰভা বলিল, বড়ো হয়েছ তুমি তোমার সব বোঝা উচিত বাবা, বাপ তো তোমার সাতেও নেই পাচেও নেই-মার দিকে একটু তাকাও? কী রকম হয়ে যাচ্ছে দেখতে পাও না ? চাউনি দেখলে বুকের মধ্যে কেমন করতে থাকে, সেদিন দেখি বিড়বিড় করে কী সব বকছে আপন মনে, আমার তো ভালো মনে হয় না। বিধানের দুচোখ ভরা রোষ, বলিল, তবু তো খাটিয়ে মারছেন। সুপ্ৰভা আহত হইয়া বলিল, আমাকে তুমি এমন কথা বললে বিধান, কত বলেছি আমি তুমি তার কী জানবে ? মাকে তোমার একদণ্ড বসিয়ে রাখার সাধি আছে কারও ? নইলে এত লোক বাডিতে, তোমার মা কিছু না করলে কাজ কি এ বাড়ির আটকে থাকবে ?--সুপ্ৰভা অভিমান করিল, বেশ, আমরা না হয় পব, তুমি তো এসেছ এবার, পাব যদি রাখ না মাকে তোমার বসিয়ে ? বিধান কারও অভিমানকে গ্রাহ করে না, বলিল, না ছোটোপিসি, মাকে আব্ব এখানে আমি রাখব না, আমি নিতে এসেছি মাকে । ওমা, কোথায় ? কোথায নিয়ে যাবে? খবর রাটিবামাত্র সুপ্রভার মুখের এই প্রশ্ন সকলের মুখে গুঞ্জরিত হইতে থাকে। বিধান শামাকে লাইতে আসিয়াছে? মাকে আর এখানে সে বাখিবে না ? কোথায লইবে? কার কাছে? অতটুকু ছেলে, এখনো বি এটা পর্যন্ত পাশ দেয় নাই, এ সব কী মতলব সে করিয়াছে ? পড়া ছেড়ে দিয়েছিস খোকা ? চাকরি নিয়েছিস ? আমাকে না বলে এমন কাজ কোন কৰতে গেলি বাবা-বলিয়া শ্যামা কঁদিতে আরম্ভ করে। বিধান বলে, কঁদছ কেন, আঁ? ভালো খবর আনলাম কোথায় আহ্বাদ করবে তা নয। তুমি কান্না জুড়ে দিলে ? পাশ তো দিতাম চাকরির জন্যে ? ভালো চাকরি পেয়ে গেলাম আব্ব পাশ দিয়ে কী করব ? ব্যাংকে লোক নেবার জন্যে পরীক্ষা হল, শঙ্কর আমাকে পরীক্ষা দিতে বললে, পাশটাশ করব ভাবিনি মা, তিনশো ছেলের মধ্যে থার্ড হয়ে গেলাম। প্রথম সাতজনকে নিলে--নব্বই টাকায় শুরু। নব্বই? বিশ-পাঁচিশ টাকার কেরানি বিধান তবে হয় নাই ? শ্যামা একটু শান্ত হয়, বলে, আমায় কিছু লিখিসনি যে ? এটা বোঝানো একটু কঠিন শ্যামাকে। পড়াশোনা করিয়া বিধান একদিন বড়ো হইবে, এত বড়ো হইবে যে চারিদিকে রব উঠিবে ধন্য ধন্য-শ্যামার এ স্বপ্নের খবর বিধানের চেয়ে কে ভালো করিয়া রাখে? তাই পড়া ছাড়িয়া চাকরি লইয়াছে চিঠিতে শ্যামাকে এ কথা লিখিতে বিধানের ভয় হইয়াছিল। শুধু তাই নয়। বিধান ভাবিয়াছিল। সে দুশো-চারশো টাকার চাকরি করিবে এই প্রত্যাশায় শ্যামা দিন গুনিতেছে, নব্বই টাকার চাকরি শুনিয়া সে যদি খেপিয়া যায় ? পরীক্ষা পর্যন্ত আরও একটা বছর ছেলের পড়ার খরচ দিতে পরিবে না ভাবিয়াই শ্যামা যে খেপিয়া যাইতে বসিয়াছিল বিধান তো তাহা জানিত না, চাকরিটা তাহার নব্বই টাকার শুনিয়াই শ্যামা এমনভাবে কৃতাৰ্থ হইয়া গেল যে বিধান অবাক হইয়া রহিল। সন্দিগ্ধভাবে সে জিজ্ঞাসা করিল, খুশি श्७न् िभो कृधि ? খুশি হয় নাই !-খুশিতে শ্যামা আবোল-তাবোল বকিতে আরম্ভ করে, এতকাল শ্যামাকে যারা অবহেলা অপমান করিয়াছে তাদের টিটকারি দেয়, কলিকাতার মস্ত বাড়ি ভাড়া নেয়, বকুলকে আনে। বিধানের বিবাহ দেয়, দাসদাসীতে ঘর-বাড়ি ভরিয়া তোলে। তারপর হাসিমুখে সকলকে ডাকিয়া বিধানের চাকরির কথা শোনায়, তার দুধের ছেলে নব্বই টাকার চাকরি জোগাড় করিয়াছে, কারও সাহায্য চায়