পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী S OVS). নাই, কারও তোষামোদ করে নাই,-বল তো বাছা এবার তাদের মুখ রইল কোথায় ছেলেকে আমার পড়ার খরচাটুকু পর্যন্ত যারা দিতে চায়নি? কথাবার্তা শুনিয়া মনে হয় শ্যামা সত্যই বড়ো অকৃতজ্ঞ! এতগুলো বছর যার আশ্রযে সে থাকিয়াছে এখন ছেলের চাকরি হওয়ামাত্র নিন্দা আরম্ভ করিয়াছে তার। এরা যে কত করিয়াছে তার জন্য সব সে ভুলিয়া গিয়াছে, মনে রাখিয়াছে শুধু ত্রুটিবিচ্যুতি, অপমান অবহেলা। মন্দা রাগিয়া বলে, ধন্যি তুমি বউ, এতও ছিল তোমার পেটে-পেটে! এত যদি কষ্ট পেয়েছ তুমি এখেনে থেকে, থাকলে কেন ? নিজের রাজ্যপাটে গিয়ে বসলে না কেন রাজরানি হয়ে ? আজি পাঁচ বছর তোমাদের পাঁচটি প্রাণীকে আমি পুষলাম, ছেলে পড়ালাম, মেয়ে বিয়ে দিলাম তোমার, আজ দিন পেযে আমাদের তুমি শাপছা! অবাক হইয়া শুনিয়া শ্যামা কঁদিতে কঁদিতে বলে, না ঠাকুরঝি, তোমাদের কিছু বলিনি তো আমি, কেন বলব তোমাদেব ? কম করেছ। আমার তোমরা! আমাকে কিনে রেখেছ ঠাকুরঝি, তোমাদের ঋণ আমি সাতজন্মে শোধ দিতে পাবিব না। তোমাদের নিন্দে করে একটি কথা কইলে মুখ আমার খসে যাবে না, কৃষ্ঠ হবে না। আমাব জিভে 1- - বলে আল হাউহাউ কবিয়া কাদিয়া শ্যামা ভাসাইয়া দেয়। শ্যামা কী পাগল হইয়া গিয়াছে? এতদিনে তাব আবার সুখের দিন শুরু হইল, এমন সময় মাথাটা গেল তাব খাবাপ হইয়া ? অনেক বলিয়া বিধান তাহাকে শোযাইয়া রাখিল, বারবার জিজ্ঞাসা করিল, তোমাব কী হযেছে মা ... - - তারপব শ্যামা অসমযে আজ ঘুমাইয়া পড়িল। অনেকক্ষণ ঘুমাইয়া সে যখন জাগিল অ্যাব তাকে অশান্ত মনে হইল না। সে শান্ত নীরব হইয়া রহিল। কত কথা শ্যামার বলিবাব ছিল, কত হিসাব কত পরামর্শ, কিন্তু এক অসাধারণ নীরবতায় সব চাপা পডিয্য বহিল। বিধান বলিল, কলিকাতায্য সে বাডি ভাড়া করি যা আসিয়াছে, শ্যামা জিজ্ঞাসাও কবিল না কেমন বাড়ি, কখানা ঘর, কত ভাড়া। এতকাল এখানে থাকিয়া তার চাকরি হওয়ামাত্র একটা মাসও অপেক্ষা না করি যা সকলের চলিযা যাওয়াটা বোধ হয ভালো দেখাইবে না, বিধান এই কথা বলিলে শ্যামা সাব্য দিয়া গেল। কিন্তু ঝোকের মাথায় বাড়ি-টাড়ি যখন সে ঠিক করিয়াই আসিয়াছে দু-চারদিন পবে চলিযা তাদেব যাইতে হইবে, বিধান এই কথা বলিলে শ্যামা তাতেও সায় দিল। ছেলের সব কথাতেই সে সায় দিযা গেল। শেষে বিধান বলিল, পঙা ছেড়েছি বলে তুমি নিশ্চয় বাগ করে, মা ! শ্যামা একটু হাসিল, না খোকা বাগ করিনি, বড়ো হয়েছ এখন তুমি বুঝেশুনে যা করবে। তাই হবে বাবা, তোমার চেয়ে আমি তো ভালো বুঝিনে, আমার বুদ্ধি কতটুকু? কাজে যোগ দিতে বিধানের দিন দশেক দেরি ছিল, যাই—যাই করিয়াও দিন সাতেক এখানে তাহারা রহিয়া গেল। শীতল চাকরি ছাড়িয়া দিয়া নিশ্চিন্ত মনে জামগাছের তলে বসিয়া তামাক টানিতে লাগিল, পোষা কুকুরটি শূইয়া বহিল তাহার পায়ের মধ্যে সুখ গুজিয়া। শীতলের ইচ্ছা! আছে কুকুরটিকেও সঙ্গে লইযা যাইবে কলিকাতায়, কিন্তু মনের ইচ্ছা প্রকাশ করিতে তার সাহস হইল না। পাগল হওয়াব আর কোনো লক্ষণ শ্যামার দেখা গেল না, সেদিন ঘুমাইয়া উঠিয়া তার যে অসাধাবণ নীরবতা আসিযাছিল। তাই শুধু কায়েমি হইয়া রহিল। আর যেন তাহার কোনো বিষয়ে দায়িত্ব নাই, মতামত নাই, সে মুক্তি পাইয়াছে। জীবন-যুদ্ধ তাহার শেষ হইয়া গিয়াছে, এবার বিধান লড়াই চালাক, বিধান সব ব্যবস্থা করুক, সংসারের ভালোমন্দের দায়িত্ব থাক বিধানের, শ্যামা কিছু জানে না, জানিতে চাহে না-ঘরের মধ্যে অন্তঃপুরের গোপনতায় তার যা কাজ এবার তাই শুধু সে করিবে। উপকরণ থাকিলে রাধিয়া দিবে পোলাউ, না থাকিলে দিবে। শাকভাত। বিধান তাহাকে এখানে রাখিলে এখানেই সে থাকিবে, কলিকাতা লইয়া গেলে কলিকাতা যাইবে, সব সমান শ্যামার কাছে। বিধানের