পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in SO 8 মানিক রচনাসমগ্র চাকুরি-লাভও শ্যামার কাছে যেন আর উল্লাসের ব্যাপার নয়, খুব সাধারণ ঘটনা। এই তো নিয়ম সংসারের ? স্বামী-পুত্র উপাৰ্জন করে, স্ত্রী ও জননী ভাত বাঁধে। আর ভালোবাসে। আর সেবাযত্ন করে। আর নির্ভয় নিশ্চিন্ত হইযা থাকে অক্ষয় অমর একটি নির্ভরে। শহবতলিতে নয, এবার খাস কলিকাতায় নূতন বাড়িতে শ্যামা নূতন সংসাব পাতিল। বাড়িটা নূতন সন্দেহ নাই, এখনও রঙেব গন্ধ মেলে। দোতলা বাড়ি, একতলাতে বাড়িওলা থাকে। দোতলার মাঝামাঝি কাঠেব বাবধান, প্রত্যেক ভাগে দুখানা ঘব। রান্নার জন্য ছাদে দুটি ছোটােছোটো-টিনের চালা। শ্যামারা থাকে দোতলাব সামনের অংশটিতে, রাস্তার উপরে ছোটাে একটু বারান্দা আছে। একটি স্বামী ও দুটি কন্যাসহ অপর অংশে বাস করে শ্ৰীমতী সরযুবালা দে, পাশ-করা ধাত্রী। সরযু যেমন বেঁটে তেমনি মেটাি, ফুটবলের মতো দেখিতে। দেহের ভরেই সে যেন সব সময় হাঁপায়। কাজে যাওয়াব সময় সে যখন সাদা কাপড়-ঢাকা রিকশয় চাপে আর শীর্ণকায় কুলিটি রিকশা টানিয়া লইয়া যায, উপর হইতে দেখিয়া শ্যামা হাসি চাপিতে পারে না। সরযুব মেযে দুটি সুন্দরী। বড়ো মেয়েটির নাম বিভা, বিধানের সে সমবয়সিই হইবে, মেযে স্কুলে গান শেখায়। ছোটাে মেযেটির নাম শামু, বিধানের বউ হইলে মানায় এমনি বযস, পডে স্কুলে। সবযুর সাধ শামুকে মেডিকেল কলেজ হইতে পাশ কাবাইয়া একেবাবে ডাক্তার করিযা ছাডিবে-পাশকরা ধাত্রী নয, লেডি ডাক্তার। লেডি ডাক্তাররা বডে অবজ্ঞার চােখে দ্যাখে সরযুকে, এতটুকু নিজেব বুদ্ধি খাটাইতে গেলেই বকে। মেয়েকে এম বি করিতে পারিলে গায্যের জ্বালা সবষুব হয়তো একটু কমিবে।--অন্তিত তাই আশা। ওমা, সে কী, মেয়েদের বিয়ে দেবেন না দিদি ?--শ্যামা বলে। করুক না বিযে ? আমি কি ধরে রেখেছি? —বলিয়া সরযু হাসে। ওদেব ব্যাপারটা শ্যামা ভালো বুঝিতে পারে না। সরযুর স্বামী নৃত্যুলাল কিছু করে-না, বসিয়া বসিযা খায় শীতলেব মতো, তবু গরিব ওবা নয়। সরযু নিজে মন্দ রোজগার করে না, বিভাও পঞ্চাশ টাকা করিয়া পায়। কানা খোঁড়া কুৎসিতও নয় মেযে দুটি সবযুর। বিবাহ দেয় না কেন ওদেব? বাধা কীসের ? বিভােব মতো বয়স পর্যন্ত বকুলকে অবিবাহিতা রাখিলে শ্যামা তো খেপিয়াই যাইত! ভাবনা হয় না। সরযুব দ্য কী আনন্দেই ওবা দিন কটায়! সাজিয়া-গুজিয়া ফিটফট হইয়া থাকে, গান করে, গ্রামোফোন বাজায়, দিবারাত্রি শ্যামার কানে ভাসিয়া আসে ওদের হাসির শব্দ। মেযে দুটি শুধু নয়, মোটা সবযু পর্যন্ত যেন উল্লাসের একটা হালকা হিল্লোলে ভাসিয়া বেড়ায়। বাপ মা আর মেয়েরা যেন বন্ধ, সমানভাবে তাহারা হাসিতামাশা করে, তাঁস খেলে চারজনে মিলিয়া, একসঙ্গে সিনেমা দেখিতে যায়। বাড়িতে লোকজনও কি আসে কম! সকলে তাহারা ধাত্রী ডাকিতে আসে না। অনেক বন্ধুবান্ধব আছে ওদের,--শ্ৰী ও পুরুষ। তাদেব মধ্যে কয়েকটি যুবক যে প্রায়ই কেন আসে শ্যামা তাহা বেশ বুঝিতে পাবে। কাঠেব বেডাব একটি ফোকবে চোখ রাখিয়া ও বাড়িতে পুরুষ ও নারীর নিঃসংকোচ মেলামেশা দেখিয়া শ্যামা থ বানিযা যায়, গান শুনিতে শুনিতে তাহারা ভাত পোড়া লাগে। বিভা এ বাড়িতে বেশি আসে না, সে একটু অহংকারী। শামু হরদম আসাযাওয়া করে। শামুর প্রকৃতিটা শ্যামার একটু অদ্ভুত মনে হয়, একদিকে যেমন সে সরল অন্যদিকে আবার তেমনি পাকা। পোকায় কাটা ফুলেব মতো সে, খানিক অসাধারণ ভালো খানিক অসাধারণ মন্দ। এমনি বয়সে বিবাহ হইয়া বকুল শ্বশুরবাড়ি গিয়াছে, মেয়েটাকে শ্যামার একটু ভালোবাসিতে ইচ্ছা হয়, শিশুর মতো সরল আগ্রহের সঙ্গে শামু তাহার ভালোবাসাকে গ্ৰন্থণ করে, শ্যামা হয় খুশি। বিধানের সঙ্গে শামুর আলাপ করিবার ভঙ্গিটা শ্যামার ভালো লাগে না। কেমন সব হেঁয়ালি-ভরা ঠাট্টা শামু করে,