পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in >のや মানিক রচনাসমগ্ৰ এত অল্পবয়সে পড়া ছেড়ে চাকরিতে ঢুকেছেন ? দুঃখের সংসার মা, উপায় কী! নইলে ছেলে আমার বড়ো ভালো ছিল পড়াশোনায়, ওর কি এ সামান্য চাকরি করার কথা ? --বলিয়া শ্যামা নিশ্বাস ফ্যালে, কী পরীক্ষা দিয়ে ডেপুটি হয় না, তাই দেবার জন্যে তৈরি হচ্ছিল, ভগবান বিরূপ হলেন। दिऊ द6, ७ ।। শ্যামার একদিকের প্রতিবেশীরা এমনি। নীচের তলার বাড়িওলা তাদের মতোই ঘরোয়া গৃহস্থ মানুষ, সরযুদের মতো উড়াউড় পাখি নয়। শ্যামার মতো তাদেরও ছােটাে-ছেলের গন্ধ ভরা ছেড়া লেপতোশক! কর্তা ছিলেন আদালতের পেশকার, পেনশন লইয়া এখন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করেন। প্রতি মাসেই দুই তারিখে সকালবেলা ভাড়ার রসিদ হাতে সিঁড়ির শেষ ধাপে উঠিয়া ডাকেন, বিধানবাবু । নেত্যবাবু! আছেন না কি ? বাড়িওলার ছেলেমেয়ে বউ নাতিনাতনিতে একতলাটা বোঝাই হইয়া থাকে, —কখানা মাত্র ঘর, কী করিয়া ওদের কুলায় কে জানে! তিনটি বিবাহিত পুত্রকে তিনখানা ঘর ছাড়িয়া দিলে বাকি সকলে থাকে কোথায় ? বাকি ঘর তো থাকে মোটে একখানি। কর্তাগিন্নি, একটি বিধবা মেয়ে, ছোটো মেয়ে আর মেযের জামাইও এখানে থাকে তারা, পেটেন্ট ওষুধের ক্যানভাসার ভাইপোটি, সকলে ওই একখানা ঘরে থাকে নাকি? প্রথম শ্যামার বড়ো দুর্ভাবনা হইত। তারপর একদিন রাত্রে বঁধিযা বাড়িয়া বাড়িওলা গিন্নিব সঙ্গে খানিক আলাপ করিতে গিয়া সে ব্যাপার বুঝিয়া আসিয়াছে। বড়ো দুখানা ঘরের প্রত্যেকটির মাঝামাঝি এ দেয়াল হইতে ও দেযাল পর্যন্ত তার টাঙানো আছে, তাতে ঝুলানো আছে ছিটের পর্দা। দিনের বেলা পর্দা গুটানো থাকে, রাত্রে পর্দা টানিয়া দুখানা ঘরকে চাবখানা করিয়া তিন ছেলে আব্ব মেয়েজামাই শয়ন করে। পর্দার উপরে একটি বিদ্যুতের বাতি জুলিয়া দুদিকের দম্পতিকে আলো দেয়। * সিঁড়ির নীচে যে স্থানটুকু আছে ক্যানভাসাব ভাইপোটি সেখানে থাকে। নাম তাঙ্গার বনবিহারী। সিঁড়ির উপরে রেলিং ঘোযিয়া দাঁড়াইলে নীচে বঁনবিহারীকে দেখিতে পাওয়া যায়। সারাদিন বাহিরে বাহিরে ঘুরিয়া রাত্রি আটটা-নটার সময় সে ফিরিয়া আসে। ওষুধের সুটকেসটি চৌকির নীচে ঢুকাইয়া জামাটি খুলিয়া সে পেরেকে টাঙাইয়া দেয়, কাপড় গায়ে দিয়া চৌকিতে বসিয়া জুতার ফিতা খোলে। তারপর চৌকিতে পা তুলিয়া নিজের পা টিপিতে আরম্ভ করে নিজেই। হঠাৎ বাড়িওলা গিন্নি ডাক দেয়, বনু এলি, বনু ? পাউরুটি আনা হয়নি, ভোলা ভুলে এসেছে, যা তো বাবা মোড়ের দোকান থেকে চট করে একটা রুটি নিয়ে আয়-সকালে উঠে খাইখাই করে সবাই তো খাবে আমায়। কোনোদিন বড়োবউ কোলেব ছেলেটিকে দিয়া যায়, বলে দাখো তো ভাই পার নাকি ঘুম পাড়াতে হেঁটো-হেঁটে। ডানা আমার ছিড়ে গেল। কোনোদিন বাড়িওলা স্বয়ং আসেন দাবার ছক লইয়া, বলেন, আয় বনু বসি একদান। —-বনুর ভাত ঢাকা দিয়ে রাখো বউ, দুধ থাকে তো দিও দিকি বনুকে একটু, দু হাতাই দিও,—ক্ষার করে রাখো বাকিটা । কালের মতো ঘন কোরো না বাছা ক্ষীর, ঘন ক্ষীর খেয়ে আজ পেট কামড়েছে,-পাতলাই রেখো। আর চিনি দিও একটু। ভানু, ও ভানু, তামাক দে দিকি মা-বড়ো কলকেতে দিস বেশি তামাক দিয়ে। এ সব দেখিয়া শুনিয়া শ্যামার চোখে যদি জল আসিত, সে জল সোজা গিয়া পড়িত বনবিহারীর মাথায় পথের ধুলায় ধূসর বৃক্ষ চুলে। এক একদিন বিভা আসিয়া দাঁড়ায়। কুঁকিয়া দেখিয়া ফিসফিস করিয়া বলে, অনেক মানুয দেখেছি, এমন বোকা কখনও দেখিনি মাসিমা। এমন করে এখানে তোর পড়ে থাকা কেন ? মেসে গিয়ে থাকলেই হয়! রোজগারপাতি বুঝি নেই।-শ্যামা বলে।