পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in Σ Σ. Ο মানিক রচনাসমগ্র শ্যামা প্ৰাণপণে মেয়েকে এটাওটা খাওয়াইবার চেষ্টা করে, বকুলের কিন্তু অত খাওয়ার শখ নাই, তার সবচেয়ে জোরালো শখটি দেখা যায়, বিধানের বিবাহ সম্বন্ধে। শ্যামাকে সে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তোলে। বলে, কী করছ মা তুমি ? চাকরিবাকরি করছে, এবার দাদার বিয়ে দাও ? শামুর সঙ্গে দাদার আত মাখামাখি দেখে ভয়ও কি হয় না তোমার ? কীসের মাখামাখি লো? —শ্যামা সািভয়ে বলে। নয়? বিয়ের যুগ্য মেয়ে, ও কেন রোজ পড়া জানতে আসবে দাদার কাছে? পড়া জানিবার দরকার হয় মাস্টার রাখুক না! না মা, দাদার তুমি বিয়ে দাঁও এবার। শামুর আসাযাওয়া শ্যামার চেয়েও বকুল বেশি অপছন্দ করে। কী পাকা গিন্নিই বকুল হইয়াছে! সাংসারিক জ্ঞানবুদ্ধিতে কচি মনটি যেন তার টইটম্বর, আঁটিতে চায় না। শামুর কাপড়পরা, বেনিপাকানো, পাউডার মাখার ঢং দেখিয়া গা যে তার জ্বলিয়া যায় শ্যামা ভিন্ন কার সাধ্য আছে তা টের পাইবে, মনে হয়। শামুর সঙ্গে সখীত্ব বুঝি তার গড়িয়া উঠিল। বনগাঁর সেই টেকিঘরখানার চালায় ইতিমধ্যে বুঝি নুতন খড়ও ওঠে নাই এক আঁটি, শঙ্করের গায়ের সেই জামাটি বুঝি আজও ছেড়ে নাই, অশ্রুমুখী সেই অবোধ বালিকা বকুল আজ এই বকুল হইয়াছে, দুটি ছেলেমানুষ ছেলেমেয়ের সহজ বন্ধুত্বে সে আঁশটে গন্ধ পায় এবং বেমালুম তাহা গোপন রাখিয়া ওদের দেখায় হাসিমুখ, নাক সিটকায মার কাছে আর করে যড়যন্ত্র। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা গড়িয়া-পিটিযা বকুলকে মানুষ করি যা দিযাছে সন্দেহ নাই। ষড়যন্ত্রে শ্যামার সায় আছে। মিথ্যা নয়, বিধানের এবার বিবাহ দেওযা দবকার বটে। বিধান শুনিয়া হাসে। বলে, পিসির গাল সয়ে নিয়ে এলাম কি না, মাকে বুঝি তাই এ সব কুপরামর্শ দিচ্ছিস খুকি? তারপর গভীর হইয়া বলে, এদিকে খরচ চলে না সে খবর রাখিস তুই ? ট্রামের টিকিট না কিনে মণির স্কুলের মাইনে দিয়েছি। এবার, তুই আছিস কোন তালে। dr বকুল বলে, আমাকে এনে তোমার খরচ বাড়ল দাদা। বকুল অভিমান কবে। সে আসিয়া খরচ বাড়াইয়াছে বিধান এ কথাব প্রতিবাদ করিলে সে খুশি হইত। কারও মন বুঝিয়া একটা কথা যদি বিধান কোনোদিন বলিতে পারে। খানিকপরে আবার উলটা। কথা ভাবিয়া বকুলের অভিমান কমিয়া যায়। তাই বটে। দাদা কী পর যে তোষামোদ করিয়া কথা করিবে তার সঙ্গে ? আবার সে প্যানপ্যান শুরু করিয়া দেয়। যুক্তি দেখায় যে ও সব বাজে ওজোর বিধানের, এই যে সে আসিয়াছে, সংসার অচল হইয়াছে কি ? একটা বউ আসিলেও স্বচ্ছন্দে সংসার চলিবে। তার চেয়ে বেশি ভাত বউ খাইবে না নিশ্চয়। সংসারের ভার গ্রহণ করার আনন্দ বিধানের এদিকে কয়েক মাসের মধ্যেই তিতে হইয়া গিয়াছিল। এই বয়সে ভাইয়ের স্কুলের মাহিনী দিতে রোজ হাঁটিয়া আপিস-করা যদি সহ্য হয়, একেবারে নবুইনবুইটা টাকাতেও যে মাসের খরচ কুলায় না এটুকু মাথা গরম করিয়া দেয় তরুণ মানুষের। বকুলকে একদিন বিধান ভয়ানক ধমকাইয়া দিল। বলিল, বিয়ে! বিয়ে! একটা টুশনি খুঁজে পাচ্ছি না, বিয়ে বিয়ে করে পাগল করে দিল আমায়। ফের ও কথা বললে চড় খাবি খুকি। বলিয়া সে আপিস গেল। বকুল নাইল না, খাইল না, গোসা করিয়া শুইয়া রহিল। বিকালে বাড়ি ফিরিয়া বিধান শুনিল শ্যামার বকুনি, তারপর সে বকুলকে তুলিয়া খাওয়াইতে গেল। আজ বিভা বসিয়াছিল বকুলের কাছে। বিধানের সঙ্গে আগে সে কোনোদিন কথা বলে নাই, আজ দয়া করিয়া বলিল, পালাচ্ছেন কেন, আসুন না? কী বলেছেন বোনকে, বোন আজ রাগ করে সাংবাদিন খায়নি?