পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in তারপর বিভা বলিল, শামু খুব প্রশংসা করে বিধানের। জগতে নাকি এমন বিষয় নাই বিধান যা জানে না? পডটড়া জানিতে আসিয়া শামু বোধ হয় খুব বিরক্ত করে বিধানকে? আশ্চর্য মেয়ে, মানুষকে এমন জ্বালাতন করিতে পারে ও! বিভা এই সব বলে, বিধান মুখ লাল করিয়া আড়ষ্টভাবে শোনে। শ্যামাও তো পিছুপিছু আসিয়াছিল বিধানের, সে আর বকুল ভাবে শামুর কথা ওঠায় বিধানের মুখ লাল হইয়াছে। তারা তো বুঝিতে পাবে না জীবনে যে কখনও মেয়েদের ধারে-কাছে ঘেঁষে নাই, বিভার মতো গান-জানা মন-টানা আধুনিক মেয়ের কাছে কী তার দারুণ অস্বস্তি। গভীর বিষাদে শ্যামার মন ভবিয়া যায়। এইবার বুঝি তার একেবারে হাল ছাড়িয়া দিবার দিন আসিয়াছে। অন্ধ মেয়ে দিযা ভগবানের সাধ মিটিল না, ছেলে কাড়িয়া নেওয়ার ব্যবস্থা করিয়াছেন এবার। বিধানেব স্নেহের স্রোত আর কি তার দিকে বহিবে? তার কড়া হাতের সেবা। আর কি ভালো লাগিবে বিধানের ? জননীকে আর তো বিধানের প্রয়োজন নাই। নিজের জীবন এবার নিজেই সে গড়িয়া তুলিবে, যে অধিকাব এতদিন শ্যামাব ছিল নিজস্ব। শ্যামা বুঝিতে পারে, জগতে এই পুরস্কার মা পায়। বকুলকে বড়ো কবিয দান করিযাছে পাবেব বাডি, তার চোখের সামনে বিধানেবা নিজেব স্বতন্ত্র জগৎ গডিযা উঠিতেছে, যেখানে তার ঠাই নাই এতটুকু। মণির বেলা ফণীর বেলাও হইবে এমনি। আপন হইযা কেহ যদি চিরদিন থাকে শামার, থাকিবে ওই অন্ধ শিশুটি, যার নিমীলিত আঁখিদুটির জন্য শ্যামার আঁখি সজ. হ২৭} গকিবে অর্জীবন। এক বাড়িতে বাস করিলে পবের জীবনেব গোপন ও গভীর জটিলতাগুলো, কেহ বলিয়া না দিলেও, ক্ৰমে ক্ৰমে সকলেই টেব পাইযা যায। বিভা ও বনবিহাবীব ব্যাপাবটা বুঝিতে পারিয়া শ্যামা ও বকুল হাসােহাঁসি কবে নিজেদেব মধ্যে। বিভার জন্য ভেড়া বনির্যা এখানে পড়িয়া আছে বনবিহারী, একটু চোখেব দেখা, একটু গান-শোনা, বিভােব যদি দয়া হয কখনও দুটি কথা-বলা এইটুকু সম্বল বনবিহারীর, মাগো মা, কী অপদাৰ্থ পুৰুষ। না জনিস ভালোরকম লেখাপড়া, কবিস ক্যানভাসারি, থাকিস পরের বাড়ি দাস হইয, তোব এ কী দুরাশা। সিঁড়ির নিচে ভাঙা চৌকিতে যার বাস তার কেন আকাশের চাদ ধৰবাব সাধা • বনবিহারীব পাগলামি বিশেষ অস্পষ্ট নয়, সকলেই জানি - সে নিজেই শুধু তা জানে না, ভাবে গোপন কথাটি তব গোপন হই যাই আছে, ছডাইয়া পড়ে নাই বাহিরে। “টের পাওয়া অবশ্য কারও উচিত হয় নাই, কারণ বনবিহারী কিছুই করে না প্রেমিকোব মতো, বিভা সিঁড়ি দিয়া নামিলে শুধু চাহিয়া থাকে, বিভা গান ধরিলে যদি আশেপাশে কেহ না থাকে। তবেই সে সিঁডি দিয়া গুটিগুটি উপরে উঠিয়া দাঁড়াইয়া থাকে, আর যা কিছু সে কবে সব চুবি করিয়া- কাবও তা দেখিবার কথা নয়। ক্যানভাস করিতে বাহির হইয়া বিভার স্কুলের কাছাকাছি কোথাও সে রোজই দাঁড়াইয়া থাকে ছুটির সময়, কোনোদিন সাহস করিয়া সামনে গিয়া বলে, ছুটি হয়ে গেল আপনার প্ল-কোনোদিন দূর হইতেই সরিয়া পড়ে। এইটুকু যে সকলে জানিয়া ফেলিয়াছে টেল পাইলে লজ্জায় বনবিহারী মরিয়া যাইবে। তারপর বিভােব কাজ করিয়া দিতেও সে ভালোবাসে বটে। লভিড়তে কা-ড়ে দিয়া লইয়া আসে, ফৰ্দমাফিক মার্কেট হইতে জিনিসপত্র কিনিয়া আনে, য-দুটি ছোটো-ছোটো মেয়ে সকালবেলা গান শিখিতে আসে বিভার কাছে, দরকার হইলে তাদের বাড়ি পৌঁছাইয়া দেয়। এখন, এ সব ছোটোখাটো উপকার কে না। কার করে জগতে ? বাড়ির কাজও তো সে কম করে না। বিভার দুটি-একটি কাজ করিয়া দেওয়ার মধ্যে তার গোপন মনের প্রতিচ্ছবি যে সকলে দেখিয়া ফেলিবে কেমন করিয়া সেটুকু অনুমান করিবে বনবিহারী ? বিভার যে ফটােখানা সে চুরি করিয়াছে সেখানা সে লুকাইয়া রাখিয়াছে ক্যানভাসিং-এ যাওয়ার সুটকেসটির মধ্যে, আর পুরানো ব্লাউজটি রাখিয়াছে তার ট্রাংকে তালাচাবি দিয়া। চুপিচুপি লুকাইয়া এগুলো সকলে যে আবিষ্কার করিয়াছে তাই বা সে জানিবে কীরূপে ?