পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী SS Gr ভালো কথা। শ্যামার এতটুকু প্রার্থনা অননুমোদন করিবে কে? স্বামীর আগামী মৃত্যুকে শ্যামা অগ্রাহ্য করুক, ক্ষমা সে পাইবে সকলের। কিন্তু সন্তানের কথা এত সে ভাবিবে কেন? ঝড়-ঝাপটা আসিলে ওদের আড়াল করিবার জন্য আজও সে থাকিবে কেন উদ্যত হইয়া? পঙগু স্বামীর কাছে বসিয়া খুকিব অন্ধ চোখদুটি দে:ি৫. ও দখিতে কেন সে হিংসা করিবে বকুলের মেয়েব পদ্মাপলাশ আঁখি দুটিকে ? এ কী অন্যায় শ্যামার! জননী হিসাবে শ্যামা তো দেবীর চেয়েও বড়ো, এত সে মন্দ স্ত্রী কেন ? শ্যামার এ পক্ষপাতিত্ব সমর্থনের যোগ্য নয়। শীতলের অবস্থার জন্য শ্যামার মনে সর্বদা আকুল বেদনা না থাকাটা হয়তো দোয্যের, তবে সেবাযত্নে শীতলকে সে খুব আরামে বাখে, শীতলের কাছে থাকিবার সময এত সে শান্ত এত তার সন্তোষ যে রোগযন্ত্রণাব মধ্যে শীতল একটু শান্তি পায়। আদর্শ পত্নীর মতো স্বামীর অসুখে শ্যাম যে উতলা নয়, এইটুকু তার সাক্ষা” । খুকিকে দুধ দিয “তুমি নীচে যায়। পথ্য আনে শীতলের। ঘটিভরা জল দেয়, গামলা আগাইয়া ধরে, বিছানায় বসিয়া মুখ ধোয় শীতল। মুখ মোছে শ্যামার আঁচলে। কঁচাপাকা দাড়িগোফে শীতলের মুখ ঢাকিয়া গিয়াছে, ঋষির মতো দেখায় তাহাকে। দীর্ঘ তপস্যা যেন সাঙ্গ হইয়াছে, এবার মহামৃত্যুর সমাধি আসিবে। কখন ? “কম্প জানে না। শ্যামা কাজেব ফাকেফাকে শতবার উপরে আসে, ডাক্তার বলিয়াছে শেষ মুহূর্ত আসিবে হঠাৎ, সে সময়টা কাছে থাকিবার ইচ্ছা শ্যামার। মোহিনী মাঝে মাঝে আসে। ওরা ভালো আছে বাবা ? বকুল আর খুঁকি ? চিঠি পাননি মা ? ---মোহিনী জিজ্ঞাসা করে। শ্যামা একগাল হাসিযা বলে, হঁয়া বাবা, চিঠি তো পেয়েছি-পবশ্ব পেয়েছি যে চিঠি। লিখেছে বােট ভালোই আছে—এমনি দশা হয়েছে বাবা আমাব, সব ভুলে যাই। কখন কোথায় কী রাখি আর খুঁজে পাইনে, খুঁজে খুজে মারি সারা বাড়িতে। বিধানবাবুর বিযে দেবেন। মা --মোহিনী এক সময় জিজ্ঞাসা ক’ম”। বকুল বুঝি চিঠি লিখিয়াছে তাগিদ দিতে । এই কথা বলিতেই হয়তো আসিযাছে মোহিনী। শ্যামা বলে, ছেলে যে বিয়ের কথা কানে তোলে না বাবা ? বলে মাইনে বাড়ক। ছেলের মত নেই, বিয়ে দেব ক’ব ? এ বাডিতে আসিয়া বিবাহের জন্য ছেলেকে শ্যামা যে পীড়াপীড়ি করিয়াছে তা নয়, ভয়ে সে চুপ করিয়া আছে, ধবিয়া লইযাছে বিবাহ বিধান এখন করিবে না। এর মধ্যে শামুকে বিধান কি আব ভুলিতে পারিয়াছে ? যে মায়াজাল ছেলের চারিদিকে কুহকী মেয়েটা বিস্তার করিয়াছিল। কয়েক মাসে তাহা ছিন্ন হইবার নয়। শামুর অজস্র হাসি আজও শ্যামার কানে লাগায়া আছে। এখন ছেলেকে বিবাহের কথা বলিতে গিয়া কি হিতে বিপরীত হইবে? যে বহস্যময় প্রকৃতি তাহাৰ পাগল ছেলের, কিছুদিন এখন চুপচাপ থাকাই ভালো। মোহিনী বলে, বিধানবাবুর অমত হবে না। মা, আপনি মেয়ে দেখুন। মোহিনীর বলার ভঙিগতে শ্যামা অবাক হইয়া যায়। এত জোর গলায্য মোহিনী কী করিয়া ঘোষণা করিতেছে বিধানের অমত হইবে না ? বিধানের মন সে জানিল কীসে ? তারপর মোহিনী ক'-টা পরিষ্কার করিয়া দেয়। বলে যে কদিন আগে বিধান গিয়াছিল তাহার কাছে, বিবাহের ইচ্ছা জানাইয়া আসিয়াছে।