পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী SS দেখিতেছে, আহ্বাদে গদগদ হইয়া মণি কথা কহিতে গিয়া টোক গিলিতেছে। ধীরে ধীরে শীতল কী যেন জিজ্ঞাসা করিতেছে সুবৰ্ণকে। সুবর্ণের মুখখানা ঈষৎ আরক্ত, কপালে বিন্দুবিন্দু ঘাম, চন্দনের স্বচ্ছ ফেঁটার মতো । ঘরের মেয়ে ? তাই তো বটে! তার স্বামী-পুত্রের মাঝখানে ওকে তো অনভ্যস্ত, আকস্মিক আগন্তক মনে হয় না। ঘরের মেয়ের মতোই যে দেখাইতেছে সুবৰ্ণকে ? শ্যামা আগাইয়া গেল, বলিল বউমা, কিছু খাওনি বিকেলে, এসে তোমায় খেতে দি। নতুন বউয়ের আব্ব ভালো মন্দ কী, সে তো শুধু একতাল। লজ্জা-ভয়-নত্ৰতা, তবু ওর মধ্যেই মনটা বোঝা যায়, সরল না। কুটিল, কুঁড়ে না। কাজের লোক। মা-হারা মেয়ে ? কথাটা শ্যামার মনে থাকে না, —তুমিই আমার হারানো মা, বলিয়া শ্যামার স্নেহের ভান্ডারে ডাকাতি করিবার মেয়েও সুবৰ্ণ নয়, সে সবল কিন্তু বুদ্ধিমতী, কাজের মানুষ কিন্তু কুলিরমণী নয়। দরকার মতো একখানা-দুখানা বাসন সে বাসন-মাজাব মতোই মাজিয়া আনে, কাজটুকু করিতে পাইয়া এমন উৎফুল্ল হইয়া ওঠে না। যে মনে হইবে পুষ্পচয়ন করিতে পাইয়াছে। শাশুড়ির হাতের কাজ কাড়িয়া যে বউ কাজ করে কোনো শাশুডিই তাকে দেখিতে পাবে না, সুবৰ্ণ সে চেষ্টা করে না, স্বাভাবিক নিয়মে যে সব কাজ শ্যামার হাত হইতে খসিয়া তাহার হাতে আসে মন দিয়া সেইগুলিই সে করিয়া যায়, আর একটি সজাগ দৃষ্টি পাতিয়া কুশলে স্প্যােমাল মুখে, তালো নিভিয়া মেঘ ঘনাইয়া আসিবার উপক্ৰমেই চালাক মেয়েটা ত্রুটি ংশোধন করিয়া ফেলে। নেহাত দোষ করিয়া ফেলি। প্রয়োগ করে একেবারে চরম অস্ত্ৰ! —চোখ দুটা জলে টাবুটুবু ভর্তি করিয়া শ্যামার সামনে r -iালিকা ধরে। ভালো করিয়া শুরু করার আগেই শ্যামার মুখের কথাগুলি শ্যামা হঠাৎ সুব বদলাইয়া সস্নেহে হাসিয়া বলে, আ আবাগের বেটি, এই কথাতে চোখে জল এল! কী আর বলেছি মা তোকে অ্যা? চোখ! অশ্রুসজল চোখকে শ্যামা বড়ো ডরায়। মানুযের চোখের সম্বন্ধে সে বড়ো সচেতন। চোখ ছিল তার বকুলের আর চোখ হইয়াছে বকুলেব মেযৌনব! শ্যামার মেন্সেটি অন্ধ, এত যে আলো জগতে একটি বেখাও তার খুঁকির চেতনায পৌছায় না। সজল চােখে চাহিয়৷ যে-কোনো দৃষ্টিস্মতী শ্যামাকে সম্মোহন কবিতে পারে। ছেলের বউটাকে ভালোবাসিবে কি বাসিবে না। এমনি মন্দ লাগে না, মায়া করিতে ইচ্ছা হয়, বকুল যে ফঁাকটা রাখিয়া গিয়াছে সুবৰ্ণকে দিয়া তাহা ভরিয়া তুলিবার কল্পনা প্রায়ই মনে হািন শ্যামার। কিন্তু হঠাৎ ৩াহার চমক ভাঙে, উঃ এ কী চিল্লোল তুলিয়া সামনে দিয়া হাঁটিয়া গেল বউ, এ কী আগুন ওর দেহময়? এমন করিয়া কে ওকে গড়িয়াছিল, রক্তমাংসের এই মোহিনীকে ? সুবৰ্ণ স্নান করে চাহিয়া দেখিয়া শ্যামার বুকের রক্ত যেন শুকাইয়া যায়। বড়ো ভয় করে শ্যামার। কে জানে" ওর ওই ভয়ানক সুন্দর দেহের আকর্ষণে কোথা দিয়া অমঙগল ঢুকিবে সংসারে। কড়া শীতে যেমন হইয়াছিল, চড়া গরম পড়িতে শ্যামার শরীর আবার তেমনি খারাপ হইয়া গেল। এবার একটা অতিরিক্ত উপসৰ্গ দেখা দিল—তিরিক্ষে মেজাজ। অল্পে অল্পে আরম্ভ করিয়া জ্যৈষ্ঠর শেষে বকুনি ছাড়া কথা বলাই যেন সে বন্ধ করিয়া দিল। থাকে-থাকে, তেলে-বেগুনে জ্বলিয়া ওঠে, যাকে পায় তাকেই যত পারে বকে, তারপর অদূক্টের নিন্দা করিতে করিতে কঁাদিয়া ফেলে। শ্যামার ভয়ে বাড়িসুদ্ধ সকলের মুখ সর্বদা শুকনো দেখায়। সবচেয়ে মুশকিল হয় সুবর্ণের। অন্য সকলে শ্যামার