পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী মামি যে শোনে সেই বলে, হঁবা, শোনবার মতো বটে ! বিশেষ করে আমাব মেজমামা। তার মুখে কোনো কিছুর এমন উচ্ছসিত প্রশংসা খুব কম শুনেছি। শুনে শুনে ভারী কৌতুহল হল। কী এমন বাঁশি বাজায় লোকটা যে সবাই এমনভাবে প্রশংসা করে ? একদিন শুনতে গেলাম। মামার কাছ থেকে একটা পরিচয়পত্র সঙ্গে নিলাম। আমি থাকি বালিগঞ্জে, আর যার বাঁশি বাজানোবা ওস্তাদির কথা বললাম। তিনি থাকেন। ভবানীপুর অঞ্চলে। মামার কাছে নাম শুনেছিলাম, যতীন। উপাধিটা শোনা হয়নি। আজ পবিচয়পত্রের উপরে পুরো নাম দেখলাম, যতীন্দ্রনাথ রায়। বাড়িটা খুজে বার করে আমার তো চক্ষুস্থির! মামার কাছে যতীনবাবুর এবং তঁর বাঁশি বাজানোর যে রকম উচ্ছসিত প্ৰশংসা শুনেছিলাম তাতে মনে হয়েছিল লোকটা নিশ্চয় একজন কেষ্টবিষ্ট গোছের কেউ হবেন। আর কেষ্টবিষ্ট্র গোছের একজন লোক যে বৈকুণ্ঠ বা মথুরার রাজপ্রাসাদ না হোক, অন্তত বেশ বড়ো আব, ভদ্রচেহারা একটা বাড়িতে বাস করেন এও তো স্বতঃসিদ্ধ কথা। কিন্তু বাড়িটা যে গলিতে সেটার কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, এ যে ইট-বার করা তিনকালের বুড়োর মতো নডবড়ে একটা ইটের খাচা! সামনেটার চেহারাই যদি এ রকম, ভিতরটা না জানি কী রকম হবে। উইয়ে ধবা দরজাব কড়া নাড়লাম। একটু পরেই দরজা খুলে যে লোকটি সামনে এসে দাঁড়ালেন তাকে দেখে মনে হল ছাঁইগাদা নাড়তেই যেন একটা আগুন বার হয়ে পডল। খুব বোগা। গায়ের রঙও অনেকটা ফ্যাকাশে হযে গেছে। তবু একদিন চেহারাখানা কী রকম ছিল অনুমান করা শক্ত নয়। এখনও যা আছে, অপুর্ব ! বছর ত্ৰিশোক বয়স, কী কিছু কম ? মলিন হয়ে আসা গায়ের রং অপূর্ব, শরীরের গড়ন অপূর্ব ; মুখের চেহারা অপূর্ব। আর সব মিলিয়ে যে বুপ তাও অপুর্ব। সব চেয়ে অপূর্ব চোখ দুটি। চোখে চোখে চাইলে যেন নেশা লেগে যায়। পুরুষেরও তা হলে সৌন্দর্য থাকে! ইট-বার-করা নোনা-ধরা দেয়াল আর উইয়ে-ধবা দরজা, তার মাঝখানে লোকটিকে দেখে আমার মনে হল ভারী সুন্দর একটা ছবিকে কে যেন অতি বিশ্ৰী একটা ফ্রেমে বধিয়েছে। বললেন, আমি ছাড়া তো বাড়িতে কেউ নেই, সুতরাং আমাকেই চান। কিন্তু কী চান ? আমার মুগ্ধ চিত্তে কে যেন একটা ঘা দিল। কী বিশ্ৰী গলার স্বর!!! কর্কশ! কথাগুলি মোলায়েম কিন্তু লোকটির গলার স্বর শুনে মনে হল যেন আমায় গাল লি দিচ্ছেন! ভাবলাম, নির্দোষ সৃষ্টি বিধাতার কুষ্ঠিতে লেখে না। এমন চেহারায় ওই গলা! সৃষ্টিকর্তা যত বড়ো কারিগর হােন, কোথায় কী মানায় সে জ্ঞানটা তার একদম নেই। বললাম, আপনার নাম তো যতীন্দ্রনাথ রায়? আমি হরেনবাবুর ভাগনে। পরিচয়পত্ৰখানা বাড়িয়ে দিলাম। এক নিশ্বাসে পড়ে বললেন, ইস! আবার পরিচয়পত্র কেন হে? হরেন যদি তোমার মামা, আমিও তোমার মামা। হরেন যে আমায় দাদা বলে ডাকে ! এসো, এসো, ভেতরে এসো। মানিক ১ম-৯