পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী। মামি У Об. সদরের দরজা খুলে বাইরে যাব, মামি আমার একটা হাত চেপে ধরে বললে, একটু দাঁড়াও ভাগনে, সামলে নিই! ওর রক্ত পড়া দেখলেই আমার এরকম হয়। বাঁশি শুনেও হতে পারে। আচ্ছা এবার এসো ভাগনে, শিগগিব আর একদিন আসবে কিন্ত। বললাম, মামার বাঁশি ছাড়াতে পাবি কি না একবার চেষ্টা করে দেখব মামি ? মামি ব্যগ্ৰকণ্ঠে বললে, পাববে। পারবে তুমি ? যদি পাব ভাগনে, শুধু তোমার যতীন মামাকে নয়, আমাকেও প্রাণ দেবে। অতসী মামি ঝরঝর করে কেঁদে ফেললে। বাস্তায় নেমে বললাম, খিলটা লাগিয়ে দাও মামি। কেবলই মনে হয়, নেশাকে মানুষ এত বড়ো দাম দেয় কেন। লাভ কী? এই যে যতীন মামা পলে পলে জীবন উৎসর্গ করে সুরের জাল বুনবার নেশায় মেতে যান, মানি তাতে আনন্দ আছে। যে সৃষ্টি করে তাবও, যে শোনে তাবও। কিন্তু এত চড়া মূল্য দিযে কী সেই আনন্দ কিনতে হবে ? এই যে স্বপ্ন সৃষ্টি, এ তে ক্ষণ, পাির। যতক্ষণ সৃষ্টি করা যায শুধু ততক্ষণ এব। স্থিতি। তাবপর বাস্তব্যেব কঠোরতার মাঝে এ স্বপ্লেব চিহ্নও তো খুঁজে পাওয়া যায় না। এ নিরর্থক মায়া সৃষ্টি করে নিজেকে ভোলাবার প্রয়াস কেন ? মানুষের মন কী বিচিত্র। আমােবও ইচ্ছে করে যতীন মামাব মতো সুরের আলোয় ভুবন ছেযে ফেলে, সুবোব আগন গগনে বেযে তুলে পলে পলে নিজেকে শেষ করে আনি! লাভ নেই ? নাই বা বইল । এতদিন জানতাম, আমিও বঁশি বাজাতে জানি। বন্ধুরা শুনে প্রশংসাও করে এসেছে। বঁশি বাজিয়ে আনন্দও যে না পাই তা নয়। কিন্তু যতীন মামার বাঁশি শুনে এসে মনে হল, বাঁশি বাজানো আমার জন্যে নয়। এক একটা কাজ করতে এক একজন লোক জন্মায়, আমি বঁশি বাজাতে জন্মাইনি। যতীন মামা ছাড বাঁশি বাজাবার অধিকাব্য কারও নেই। থাকতে পাবে কারও অধিকার। কারও কারও বাঁশি হয়তো যতীন মামােপ বঁশিব চেয়েও মনকে উতলা “কবে তোলে, আমি তাদের চিনি না। একদিন বললাম, বাঁশি শিখিয়ে দেবে মামা ? যতীন মামা হেসে বললে, বাঁশি কি শেখাবার জিনিস ভাগনে ? ও শিখতে হয়। তা ঠিক। আর শিখতেও হয় মন দিয়ে, প্ৰাণ দিয়ে, সমগ্ৰ সত্তা দিযে। নইলে আমার বাঁশি শেখার মতোই সে শিক্ষা বাৰ্থ হয়ে যায়। অতসী মামিকে সেদিন বিদায় নেবার সময় যে কথা বলেছিলাম সে কথা ভুলিনি। কিন্তু কী করে যে যতীন মামার বাঁশি ছাড়াব ভেবে পেলাম না। অথচ দিনের পর দিন যতীন মামা যে এই সর্বনাশা নেশায় পলে পলে মরণের দিকে এগিয়ে যাবেন ? কথা ভাবতেও কষ্ট হ'ল। কিন্তু করা যায কী? মামির প্রতি যতীন মামার যে ভালোবাসা তার বোধ হয় তল নেই, মামির কান্নাই যখন ঠেলেছেন তখন আমার সাধ্য কী তাকে ঠেকিয়ে রাখি ! একদিন বললাম, মামা, আর বঁশি বাজাবেন না । যতীন মামা চোখ বড়ো বড়ো করে বললেন, বাঁশি বাজাব না ? বল কী ভাগনে? তাহলে বাঁচব কী করে ? বললাম, গলা দিয়ে রক্ত উঠছে, মামি কত কঁাদে।