পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী মামি აvტრl বললাম, আপনি না সেদিন বলছিলেন মামা, এ রকম বঁশি খুঁজে পাওয়া দায়, অনেক বেছে আপনি কিনেছেন? আমি একশো পয়ত্ৰিশ দিয়েই ওটা কিনিব। যতীন মামা বললেন, তা কি হয়! পুরনো জিনিসবললাম, আমাকে কি জোচোর পেলেন মামা ? আপনাকে ঠকিয়ে কম দামে বাঁশি কিনিব ? পকেটে দশ টাকার তিনটে নোট ছিল, বার করে মামার হাতে দিয়ে বললাম, ত্ৰিশ টাকা আগাম নিন, বাকি টাকাটা বিকেলে নিয়ে আসব। যতীন মামা কিছুক্ষণ স্তব্ধভাবে নোটগুলির দিকে তাকিয়ে রইলেন, তারপর বললেন, আচ্ছা! আমি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। যতীন মামার মুখের ভাবটা দেখবার সাধ্য হল না। যতীন মামা ডাকলেন, ভাগানেফিরে তােকালাম । যতীন মামা হাসবার চেষ্টা কবে বললেন, খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে ভেব না, বুঝলে ভাগনে? আমার চোখে জল এল। তাড়াতাড়ি মুখ ফিরিয়ে মামির শিয়বে গিয়ে বসলাম। মামির ঘুম ভাঙেনি, জানতেও পারল না যে রক্তপিপাসু বঁশিটা ঝলকে ঝলকে মামার রক্ত পান করেছে, আমি আজ সেই বাঁশিটা কিনে নিলাম। মনে মনে কের দিলাম, মিথ্যে আশা। এ যে বালির বাধ ! একটা বাঁশি গেল, আর একটা কিনতে কতক্ষণ ? লাভের মধ্যে যতীন মামা একান্ত প্ৰিয়বস্তু হাতছাড়া হয়ে যাবার বেদনাটাই পেলেন। বিকালে বাকি টাকা এনে দিতেই যতীন মামা বললেন, বাড়ি যাবার সময় বাঁশিটা নিয়ে যেও । আমি ঘবে ঢুকতে ঢুকতে বললাম, থাক না এখন কদিন, এত তাড়াতাড়ি কীসের গ যতীন মামা বললেন, না। পরের জিনিস আমি বাড়িতে বাখি না। বুঝলাম, পরের হাতে চলে যাওয়া বাঁশিটিা চোখেব ওপরে থাকা তার সহ্য হবে না । বললাম, বেশ মামা, তাই নিয়ে যাবখন। মামা ঘাড় নোডে বললেন, হ্যা, নিয়েই যেও । তোমাব জিনিস এখানে কেন ফেলে রাখবে। বুঝলে না ? উনিশ দিনেব দিন মামির অবস্থা সংকটজনক হয়ে উঠল। যতীন মামা টুলটা বিছানাব। কাছে টেনে টেনে মামির একটা হাত মুঠো করে ধরে নীরবে তার বোগশীর্ণ ঝরা ফুলের মতো স্নান মুখের দিকে চেয়েছিলেন, হঠাৎ অতসী মামি বললে, ওগো আমি বোধ হয়। আর বঁচিব না। যতীন মামা বললেন, তা কি হয়। অতসী, তোমায বাঁচতে হবেই। তুমি না বাঁচলে আমিও যে বাঁচব না ? মামি বললে, বালাই, বাঁচবে। বইকী। দ্যাখো, আমি যদি নাই বাঁচি, আমার একটা কথা রাখবে ? যতীন মামা নত হয়ে বললেন, রাখব। বিলো । বঁশি বাজানো ছেড়ে দিয়ে। তিলতিল করে তো শার শরীর ক্ষয় হচ্ছে দেখে ওপারে গিয়েও আমার শান্তি থাকবে না। রাখবে আমার কথা ? মামা বললেন, তাই হবে অতসী। তুমি ভালো হয়ে ওঠে। আমি আর বঁশি ছোব না। মামির শীর্ণ ঠোঁটে সুখের হাসি ফুটে উঠল। মামার একটা হাত বুকের ওপর টেনে শ্রান্তভাবে মামি চোখ বুজল। আমি বুঝলাম যতীন মামা আজ তীর রোগশয্যাগতা অতসীর জন্য কত বড়ো একটা ত্যাগ করলেন। অতি মৃদুস্বরে উচ্চারিত ওই কটি কথা, তুমি ভালো হয়ে ওঠে, আমি আর বঁশি ছোব না,