পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী মামি >○。 আমি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললাম, এত কাণ্ড করলে মামা, আমাকে একবার জানালে না পর্যন্ত! কবে যাওয়া ঠিক হ’ল ? বাঁধা বিছানা আর তালাবন্ধ ব্যাকসের দিকে আঙুল বাড়িয়ে মামা বললেন, আজ। রাত্রে ঢাকা মেলে। রওনা হব। আমরা বাঙালি হে ভাগনে, জানো না বুঝি ? বলে মামা হাসলেন। অবাক মানুষ! এমন অবস্থায় হাসিও আসে! গম্ভীরভাবে উঠে দাঁড়িযে বললাম, আচ্ছা, আসি যতীন মামা, আসি মামি । বলে দরজার দিকে &leनदा ठू८ना ! অতসী মামি উঠে এসে আমার হাতটা চেপে ধবে বললে, লক্ষ্মী ভাগনে, রাগ কোরো না। আগে থাকতে তোমায় খবর দিয়ে লাভ তো কিছু ছিল না, কেবল মনে ব্যথা পেতে। যে ভাগনে তুমি, কত কী হাওগামা বাধিয়ে তুলতে ঠিক আছে কিছু ? আমি ফিরে গিয়ে বাধা বিছানাটার ওপর বসে বললাম, আজ যদি না আসতাম, একটা খবরও তো পেতাম না। কাল এসে দেখতাম, বাড়িঘর খাঁখা করছে। যতীন মামা বললেন, আরে রামঃ! তোমায় না বলে কি যেতে পারি? দুপুরবেলা সেনের ডাক্তাবখানা থেকে ফোন করে দিয়েছিলাম তোমাদের বাডিতে। কলেজ থেকে বাড়ি ফিরলেই খবর ርዏዘር፰5 ! বাড়ি আর গেলাম না। শিযালদহ স্টেশনে মামা-মামিকে উঠিয়ে দিতে গেলাম। গাড়ি ছাড়ার আগে কতক্ষণ সময় যে কী করেই কাটল! কারও মুখেই কথা নেই। যতীন মামা কেবল মাঝে মাঝে দু একটা হাসিব কথা বলছিলেন এবং হাসাচ্ছিলেনও। কিন্তু তার বুকের ভেতর যে কী করছিল। সে খবর আমাব অজ্ঞাত থাকেনি। গাড়ি ছাড়বার ঘণ্টা বাজলে যতীন মামা আর অতসী মামিকে প্ৰণাম করে গাড়ি থেকে নােমলাম। এইবার যতীন মামা অন্যদিকে মুখ ফিবিয়ে নিলেন। আর বোধ হয় মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখা তঁর পক্ষে সম্ভব তুলে না । জানােলা দিয়ে মুখ বাব করে মামি ডাকলে, শোনো। কাছে গেলাম। মামি বললে, তোমাকে ভাগনে বলি আব্ব যাই বলি, মনে মনে জানি তুমি আমার ছোটাে ভাই। পার তো একবার বেড়াতে গিয়ে দেখা দিয়ে এসো। আমাদেব হয়তো আর কলকাতা আসা হবে না, জমির ভাবী ক্ষতি হয়ে গেছে। যেও, কেমন ভাগনে ? মামির চোখ দিয়ে টপটপ করে জল ঝরে পড়ল। ঘাড নোডে জানালাম, যাব। বাঁশি বাজিয়ে গাড়ি ছাড়ল। যতক্ষণ গাড়ি দেখা গেল অপলিক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম। দুরের লাল সবুজ আলোকবিন্দুর ওপারে যখন একটি চলন্ত লাল বিন্দু অদৃশ্য হয়ে গেল তখন ফিরলাম। চোখের জলে দৃষ্টি তখন ঝাপসা হয়ে গেছে। মানুষের স্বভাবই এই যখন যে দুঃখটা পায় তখন সেই দুঃখটাকেই সকলের বড়ো কবে দেখে। নইলে কে ভেবেছিল, যে যতীন মামা আর অতসী মামির বিচ্ছেদে একুশ বছর বয়সে আমার দুচোখ জলে ভরে গিয়েছিল সেই যতীন মামা আর অতসী মামি একদিন আমার মনের এক কোণে সংসারের সহস্ৰ আবর্জনার তলে চাপা পড়ে যাবেন। জীবনে অনেকগুলি ওলট-পালট হয়ে গেল। যথাসময়ে ভাগ্য আমার ঘাড় ধরে যৌবনের কল্পনার সুখস্বৰ্গ থেকে বাস্তবের কঠোর পৃথিবীতে নামিয়ে দিল। নানা কারণে আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ল। বালিগঞ্জের বাড়িটা পর্যন্ত বিকি করে ঋণ শোধ দিয়ে আশি টাকা মাইনের একটা চাকরি