পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী মামি S8S চেচিয়ে ডাকলাম ও মশায়-মশায় শুনছেন ? গেটের ওপারে ভদ্রলোক দুটি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। বাঁশি বাজিয়ে গাড়িও ছাড়ল। অগত্যা নিজের জায়গায় বসে পড়ে ভাবলাম, তবে কি ইনি একাই চলেছেন নাকি? বাঙালির মেয়ে নিশ্চয়ই, র্যাপার দিয়ে নিজেকে ঢাকবার কায়দা দেখেই সেটা বোঝা যায়। বাঙালির মেয়ে, এই রাত্ৰিবেলা নিঃসঙগ যাচ্ছে, তাও আবার পুরুষদের গাড়িতে! একটু ভেবে বললাম, দেখুন, শুনছেন? সাড়া নেই। বললাম, আপনার সঙ্গীরা সব নেমে গেছে, শুনছেন ? এইবার আলোয়ানের পোটল নাড়ল, এবং আলোয়ান ও ঘোমটা সরে গিয়ে যে মুখখানা বার হল দেখেই আমি চমকে উঠলাম। কিছু নেই, সে মুখের কিছুই এতে নেই। আমার অতসী মামির মুখের সঙ্গে এ মুখের অনেক তফাত। কিন্তু তবু আমাৰ মনে হল, এ আমার অতসী মার্মিই! মৃদু হেসে বললে, গলা শুনেই মনে হয়েছিল এ আমার ভাগনের গলা। কিন্তু অতটা আশা করতে পারিনি। মুখ বার কবতে ভয় হচ্ছিল, পাছে। আশা ভেঙে যায়। আমি সবিস্ময়ে বলে উঠলাম, অতসী মামি! মামি বললে, খুব বদলে গেছি, না ? মামির সিঁথিতে সিঁদুব নেই, কাপড়ে পাড়ের চিহ্নও খুজে পেলাম না। চার বছর আগে ঢাকা-মেল কলিশনে মৃতদের তালিকায় একটা অতি পরিচিত নামের কথা মনে । পড়ল। যতীন মামা। তবে সত্যিই নেই। আস্তে আস্তে বললাম, খবরের কাগজে মামার নাম দেখেছিলাম মামি, বিশ্বাস হয়নি সে আমার যতীন মামা। একটা চিঠি লিখেছিলাম, পাওনি ? মামি বললে, না। তারপরেই আমি ওখান থেকে দু-তিন মাসেব জন্য চলে যাই। বললাম, কোথায় ? আমার এক দিদির কাছে। দূর সম্পর্কের অবশ্য। আমায় কেন একটা খবর দিলে না মামি ? মামি চুপ করে রইল। ভাগনের কথা বুঝি মানে ছিল না ? মামি বললে, তা নয়, কিন্তু খবর দিয়ে আর কী হত! যা হবাব তা তো হয়েই গেল। বঁশিকে ঠেকিয়ে বাখলাম, কিন্তু নিয়তিকে তো ঠেকাতে পারলাম না। তোমার মেজোমামার কাছে তোমার কথাও সব শুনলাম, আমার দুর্ভাগ্য নিয়ে তোমায় আর বিরক্ত করতে ইচ্ছে হল না। জানি তো, একটা খবর দিলেই তুমি ছুটে আসবে! চুপ করে রইলাম। বলবার কী আছে। কী নিয়েই বা অভিমান করব ? খবরেব কাগজে যতীন মামার নাম পড়ে একটা চিঠি লিখেই তো আমার কর্তব্য শেষ করেছিলাম। মামি বললে, কী কবছ। এখন ভাগনে ? চাকরি। এখন তুমি যােচ্ছ কোথায়? মামি বললে, একটু পরেই বুঝবে। ছেলেপিলে কািট ? আশ্চর্য! জগতে এত প্রশ্ন থাকতে এই প্রশ্নটাই সকলের আগে মামির মনে জেগে উঠল! বললাম, একটি ছেলে।