পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in অতসী মামি S 8 ASD বললাম, সতেরোই অস্ত্রান। মামি বললে, চার বছর আগে আজকের দিনে-বুঝতে পারছি না। তুমি ? মুহূর্তে সব দিনের আলোর মতো স্বচ্ছ হয়ে গেল। ঠিক! চার বছর আগে এই সতেরোই অস্ত্ৰান ঢাকা মেলে কলিশন হয়েছিল। সেদিনও এমনি সময়ে এই ঢাকা মেলটির মতো সেই গাড়িটা শত শত নিশ্চিন্ত আরোহীকে পলে পলে মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। বলে উঠলাম, মামি ! মামি স্থিরদৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে চেয়ে থেকে বললে, সামনের স্টেশনের অল্প ওদিকে লাইনেব ধারে কঠিন মাটির ওপর তিনি মৃত্যু্যযন্ত্রণায় ছটফট করেছিলেন। প্রত্যেক বছর আজকের দিনটিতে আমি ওই তীর্থদর্শন করতে যাই। আমার কাছে আর কোনো তীর্থের এতটুকু মূল্য নেই। হঠাৎ জানালার কাছে সরে গিয়ে বাইরের দিকে আঙুল বাড়িয়ে মামি বলে উঠল, ওই ওই ওইখানে! দেখতে পােচ্ছ না ? আমি তো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। তিনি যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে একটু স্নেহশীতল স্পর্শের জন্য ব্যগ্র হয়ে রয়েছেন। একটু জল, একটু জলের জন্যেই হয় তো!—উঃ মাগো, আমি তখন কোথায় ! দু। হাতে মুখ ঢেকে মামি ভেতরে এসে বসে পড়ল। ধীরে ধীৰে গাডিাখানা স্টেশনের ভেতর ঢুকল। বিছানাটা গুটিয়ে নিযে আমি বললাম, চলো মামি, আমি তোমার সঙ্গে যাব। মামি বললে, না । বললাম, এই রাত্রে তোমাকে একলা যেতে দিতে পারব না মামি । মামির চোখ জ্বলে উঠল, ছিঃ ! তোমার তো বুদ্ধির অভাব নেই ভাগনে। আমি কি সঙ্গী নিয়ে সেখানে যেতে পারি? সেই নির্জন মাঠে সমস্ত রাত আমি তার সঙ্গ অনুভব করি, সেখানে কি কাউকে নিয়ে যাওয়া যায়! ওইখানের বাতাসে যে তার শেষ নিশ্বাস রয়েছে! অবুঝ হয়ো না—— গাড়ি দাডাল । বঁাশিটা তুলে নিযে মামি বললে, এটা নিয়ে গেলাম ভাগনে! এটার ওপর তোমার চেয়ে আমার দাবি বেশি। দরজা খুলে অতসী মামি নেমে গেলেন। আমি নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলাম। আবার বাঁশি বাজিয়ে গাড়ি ছাড়ল। খোলা দরজাটা একটা করুণ শব্দ করে আছড়ে বন্ধ হয়ে গেল ।