পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in S8t মানিক রচনাসমগ্র বিকালে দুভাইকে খাবার দিয়ে মা বললেন, তোর নেকিন্দি দু দিন এল না কেন রে পুলক ? পুলক আমে কামড় দিয়েছিল, আমাটা সরিয়ে সংক্ষেপে জবাব দিল, দাদা বকেছে। বলে আবাব আমটা মুখে তুলল। দাদা বকেছে! সত্যি নাকি রে অশোক ? हैं। আবার ঝগড়া হয়েছে তোদের? কী হয়েছিল ? অশোক বললে, পরশু তুমি বাড়ি ছিলে না, দুপুরবেলা বই হাতে করে এসে হাজির। যেমনি বলেছি মা বাড়ি নেই, বিকেলে আসবেন, যা মুখে এল বলে চলে গেল। সবটুকু দোষ অশোক নির্বিকারে নেকির ঘাড়েই চাপিযে দিল। এমনি করে মানুষ নিজের অন্যায় করার জ্বালার সাস্তুনা খোজে! বেদনা দেওয়া সহজ, আঘাত করা ততোধিক! কিন্তু আমন একটা সহজ কাজ কবেও সুখ মেলে না। সুন্দরী এবং তরুণী আর হাসিভরা মুখখানি যে কথার আঘাতে স্নান করে দিয়েছিল, এই স্মৃতিটা কঁাটার মতো ব্ৰমাগত বিঁধে চলে। মা বললেন, কী ছেলেমানুষি যে তোরা করছিস অশোক। নেকি তো গায়ে পড়ে ঝগড়া করার মেয়ে নয় । না। খুব ভালো মেয়ে ! রোদ পড়ে এলে পুলককে নিয়ে অশোক বেড়াতে বার হল। আমবাগানের পরেই বিস্তুত মাঠ, আলে আলে পাযে গড়ে ওঠা সরু পথটি দিয়ে চলতে তার এমনি ভালো লাগে। মাঝে মাঝে লাঙল দেওয়া খেতে নেমে পড়ে, মাটির ঢেলাগুলি পায়ের নীচে গুডিয়ে যায়। খেতগুলি সমস্তদিন বৈশাখের বেহিসাবি সূর্যের তাপ চুবি করে সঞ্চিত করে রাখে, সূর্য বিদায় নিলে মৃদুভাবে সেই তাপ বিকীর্ণ করে! অশোক সর্বাঙগ দিয়ে সেটুকু অনুভর করে। চাষা মাটির অস্পষ্ট সুবাস তার মনকে উদাস করে দেয়। পুলিকের হাত ধবে চলতে চলতে অশোক ভাবে, এমনিভাবেই মাটি যেন নিজেকে চিনিযে দিতে চায়। নিশ্চল জড় যেন বলতে চায়, সারা জাগতেব জীবনের রস যোগাই আমি, আমায চিনে রাখো ! মাঠের পরে বাড়ি থেকে মাইল খানেক তফাতে ছোটো একটা নদী, এখন স্রোত নেই। স্থানে স্থানে জল জমে আছে, বাকিটুকু বালিতে বোঝাই। সাদা ধবধবে বালি। এককালে স্রোতের নীচে ছিল, জলের গতি নিপুণ শিল্পীব মতো অপূর্ব নকশা একে দিয়েছে। কোথাও বালির বুকে ঢেউয়ের ছবির তুবহু ছাপ পড়েছে, কোথাও বিচিত্র রেখার সমাবেশে সূক্ষ্মী আলপনা গড়ে উঠেছে। এমনি সূক্ষ্ম এমনি কোমল যে, দেখলে মনে হয় আঁকল কে ? অশোক নিত্য এইখানে এসে বসে। পায়ের দাগে বালির কারুকার্য নষ্ট হয়ে যায়, অশোক ব্যথিত হয়ে ওঠে। অথচ ওই কারুকার্য শতকরা নিরানব্বুই জনের চোখেই হয়তো পড়ে না। তুচ্ছ বলে নয়, সূক্ষ্ম সৌন্দর্য আবিষ্কার করবার মানুষের একটা বিপুল অক্ষমতা আছে বলে । অশোক আজ সেইখানেই যাচ্ছিল। আমবাগানের ভেতরে একটা মোটা গাছের গুড়ি পাক দিতেই অশোক আর নেকি একেবারে মুখোমুখি পড়ে গেল। কাপড় গামছা নিয়ে নেকি স্নান করতে যাচ্ছিল, চোখাচে্যুখি হতেই তার মুখের ভাব কঠিন হয়ে উঠল। নিঃশব্দে একপাশে সরে গিয়ে সে অশোককে fFF1 অশোক এগিয়ে গেল, কিন্তু পুলক নেকির সামনে দাঁড়িয়ে বললে, আর যে আমাদের বাড়ি যাও না নেকিন্দি ? দাদা আর কিছু বলবে না, মা বকে দিয়েছে। অশোক এগিয়ে গিয়েছিল, দাঁড়িয়ে ডাকল, পুলক আয, দেরি হয়ে গেছে।