পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in >○ と。 মানিক রচনাসমগ্র মা কী কাজে উঠে যেতেই বাটির দুধ প্রায় সবটা কড়ায় ঢেলে দিয়ে চোখ কান বুজে বাকিটুকু নেকি উদারস্থ করে ফেললে। চায়ের কাপ তুলে নিয়ে বললে, দুধ তো না, বিষ! তাই দেখছি। মাকে বলতে হবে। না লক্ষ্মী, বলবেন না। এক্ষুনি একবাটি দুধ গিলিয়ে দেবেন। ভালোই তো ! ভালো বইকী! চায়ের কাপটা শেষ করে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে, মার আসবার আগেই পালাই তাহলে। অশোক বললে, না বসো, বলব না। রাঁধতে হবে, পিসিমার অসুখ। এই শরীরে রাঁধবে? না রাঁধলে চলবে কেন? মামা দুদিন হাত পুড়িয়ে বেঁধে খেয়েছেন। ওই যা, আসল কথাই ভুলে গেছি। বিকালে আপনার আম খাবার নেমস্তন্ন রইল, পুলককে নিয়ে যাবেন। বলে নেকি চলে গেল। বিকালে প্ৰায ছাঁটার সময় পুলককে সঙ্গে নিয়ে অশোক আম খাবার নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেল। হৃদয় চক্রবর্তী একগাল হেসে অভ্যর্থনা করলেন। কী সৌভাগ্য—কথাটাই উচ্চারণ করলেন বার কুডি। চক্ৰবতীর বয়স নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। মাথার চুলে পাক ধরেছে। চুল বলা সংগত নয, কদমফুলের পাপড়ি। মুখে দাঁড়িগোঁফের জঙ্গল। হাসবার উপক্রম করলেই সেই জঙ্গল ফঁাক হয়ে তামাকের ধোঁয়ার বিবৰ্ণ কতকগুলি দাঁত আত্মপ্রকাশ করে। এমনি অতিরিক্ত বিনয় প্রকাশ করতে লাগলেন যে, সেগুলি প্রকাশ হয়েই বইল । বড়ো ঘরের বারান্দায় সেই ভাঙা চেয়ার আর টুলখানা পাতা হয়েছিল, অশোক আর পুলককে বসিয়ে চক্ৰবতী নিজে একটা পিঁড়ি দখল করে উবু হয়ে বসে ডাকলেন, নেকি! নেকি ভেতর থেকে সাড়া দিল, আমি কেটে নিয়ে যাচ্ছি মামা। দু-থালা বোঝাই আমি দুজনের সামনে ধরে দিতেই অশোক বললে, এ কী ব্যাপার! এত আমি খাব কী করে ? চক্রবর্তী মাথা নেড়ে বললেন, কিছু না কিছু না। যুবাকাল, লোহা পেটে পড়লে হজম হয়ে যাবে। খান, লজ্জা করবেন না। আপনার মাঠাকুরুন নেকিকে স্নেহ করেন। তাই, নইলে আমাদেব মতো লোকের বাড়ি আপনাকে খেতে বল---সাহসই হত না! নেকি মুচকে হেসে ভেতবে চলে গেল। কী যে বলেন!! বলে অশোক একটা আম মুখে তুলে নিলে। বললে, খা পুলক, উনি যখন ছাড়বেন। না, যা পারি। খাই, বাকি নষ্ট হবে। চক্রবর্তী মোক্তার মানুষ বকতে পারেন, আসর সরগরম করে রাখলেন। অশোক কখনও কুঁ দিয়ে কােজ সারতে লাগল, কখনও বললে, নিশ্চয়! কখনও মৃদু হেসে বললে তা-বইকী! বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে ভ্ৰমণ করে চক্রবর্তী কলিকালের লোকের ধর্মজ্ঞানহীনতা এবং উৎকট লোভ-পরায়ণতার কথা কীর্তন করলেন। বললেন, আদালতে এত মামলা মকদ্দমা কী জন্যে মশায়? ওই লোভ! মিথ্যে সাক্ষী তৈরি করে কার দুবিঘে জমি আছে তাই আত্মসাৎ করবার চেষ্টা! কেনরো বাপু? পরের জিনিস নিয়ে টানাটানি কেন ? নিজের যা আছে তাই নেড়ে-চেড়ে খা না! অশোক ঘাড় নেড়ে সায় দিলে, তা বইকী! এইবার চক্রবর্তীর এই চিন্তার উৎসমুখের সন্ধান পাওয়া গেল। একটা পাজি লোক তঁর পাঁচ বিঘে জমি যে কীরকমভাবে আত্মসাৎ করবার উপক্রম করেছে এবং অশোকের বাবার কাছেই মিথ্যে