পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী মামি S VISE উদগারের শব্দে সচেতন হয়ে দেখলাম, তার খাওয়া ও বক্তৃতা শেষ হয়েছে। পুনরায় উদগার তুলে বললে, আর খাব না, দামটা দিযে দিন। দিচ্ছি। এত ঘটা করে সাজ করেছেন কেন বলুন তো ? দিদির শোকে না কি ? কালো দাঁত বার করে সে হাসল, আরে রামো, সে বৃহত্তর মহত্তব জীবনে সার্থক হতে গেছে। তার জন্যে শোক কী। আবার বিয়ে করে ফেলেছি কি না---বুঝলেন না ? দুটো পযসা দিন তো, পান কিনব । আমার হঠাৎ ইচ্ছা হল খাবাবেব দাম না দিয়ে চলে যাই ; দোকানিল হাতের অনেক মিষ্টি খেয়েছে, একটু প্ৰহাবও খাক। কষ্টে সে সংগত ইচ্ছা সংযত করে দাম মিটিযে দিলাম। পান খাবার পয়সা দিয়ে নাৰী-সমিতিব নাম টুকে নিয়ে পথে নেমে গেলাম। পথে মানুসেবা ভিড। আমার মনে হল, একই পথ বেয়ে আমিও চলেছি। এত লোকও চলেছে কিন্তু প্রত্যেকেব। মনোবেদনার উৎস। কত বিভিন্ন ! এতগুলো চিন্তা-জগতের একটিতেও কি মমতাদির মতো কেউ নীরব দুঃখের পদচিহ্ন একে 6びエ&? নারী-সমিতিটিব খোজ করে সম্পাদিকার সঙ্গে দেখা কবলাম। তিনি জানালেন মমতাদি মাঝে একমাস জেল খেটেছে এবং আবার জেলে যাবার জন্য বাড়াবাডি আবিস্ত করায় তাকে মফস্বলে কাজ করতে পাঠানো হযেছে। এই সমিতিৰ কাজ গঠনমূলক, ধ্বংস এব। কর্মীদের ব্রত নয়, মমতাদিকে নিয়ে সম্পাদিকাব বড়ো মুশকিল। পাবদিন আমি মমতাদি যে গ্রামে ছিল সেখানে গেলাম। কলকাতা থেকে চাব পাঁচ ঘণ্টােব পথ । বেশ বডো গ্রাম। প্রামেব পাশে একটা নদী। খোজ করে, শোভার প্রাচুর্যে নদীতীব যেখানে আপনাতে আপনি মুগ্ধ হযে আছে সেইখানে একটি ছোটাে টিনেৰ বাডিতে মমতাদিল দেখা পেলাম। মমতাদি এবং তার সঙ্গিনীদেব জন্য গ্রামের কে এক সদাশয় ব্যক্তি এই বাডিখানা ছেডে দিয়েছিলেন। তখন দুপুব। শবতেব প্রথম হলেও বোদের তেজ ছিল। সদবের বাবান্দাযী উঠে দাড়াতে চাব পাঁচটি চবকার শব্দ শুনতে পেলাম। মমতাদিকে ডাকতে চরকা থেমে গেল, সে বেরিয়ে এল। হেসে বললে, এসেছ ? আমি জানতাম খোজ পেলে তুমি আসবেই, দু-এক ঘণ্টা তর্ক করবেই ! তোমার প্রতীক্ষা করছিলাম। আমি। তর্ক করব নিশ্চিত জান ? জানি। যে কাণ্ড করেছি, তর্ক না কবে তুমি ছাডবে ? যদি না করি তর্ক ? বিস্মিত হব! ভেবে পাব না বাঙালি হয়েও তর্কের এমন সুযোগ কী করে ত্যাগ করলে। কিন্তু তুমি করবে। তোমার চোখে-মুখে তর্ক উকি মারছে। অন্তত আলোচনা। নদীতে নেমে মুখ-হাত ধুয়ে আমি বারান্দায় মাদুরে বসলাম। সেও বসল, অর্ধেক মাদুরে অর্ধেক মাটিতে। মেয়েরা আমনিভাবে বসে, বিনয়ের লক্ষণ ওটা। কথা আরম্ভ হওয়ার আগে আমি একবার ভালো করে তার মুখ দেখে বুঝবার চেষ্টা করলাম, এ জীবনে সে সুখী হয়েছে কিনা। কিছুই স্পষ্ট বোঝা গেল না। আগের জীবনে সে অসুখী ছিল। কিন্তু মুখের একটু স্নানিমা দেখে তার অসুখেব পরিমাণ স্থির করা যেমন সম্ভব ছিল না, আজ সেই মানিমার অন্তর্ধান এবং দেহে স্বাস্থ্য ও চোখে-মুখে একটা শান্ত জ্যোতির আবির্ভাব দেখে বোঝা গেল না। সে কতখানি সুখী হয়েছে। বিশেষ, মাঝে মাঝে তার দৃষ্টিতে ব্যথার বিকাশ দেখা যেতে লাগল। সে প্রশ্ন করল, তুমি কি আমাকে সমর্থন কর না?