পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী মামি Տ ՆԳ অরুচি। প্ৰাণপাত সেবায় দেশের বুকের পাথরকে পাহাড় করে তোলা পাপ। ...তোমার দুচোখে প্রতিবাদ কেন? সংস্কার কি তোমাব পাপ আর ব্যর্থতার স্বরুপ ভুলিয়ে দিচ্ছে? আমি বললাম, না। তোমার কথাগুলি এত ছোটাে-বড়ো কথােব চুম্বক যে হঠাৎ শুনে ঠিক মতো ধারণা করে উঠতে পারছি না। সে বললে, সেটা আশ্চর্য নয। বিয়ের পর থেকে এগারো বছর শুধু তো জ্বলিনি--তিল তিল করে চিন্তার হিমালয় সৃষ্টি করেছি। আমার কথা তোমার চিন্তাশক্তিকে পীড়ন তো করবেই। এগারো বছরের ভাবনা কি দু মিনিটে ভাবা যায়? আমি বললাম, বুদ্ধি থাকলে যায়, বোকা হলে যায না। আমি সময়মতো ভাবিব। তুমি বলে যাও, আমি আরও কিছু ভাবনাব খোরাক সংগ্ৰহ করি। সে বললে, ভেবো। ভেবে দেখ আমি বাডিয়ে বলিনি, অবস্থা বিশেষে মা হওয়া সত্যই মহাপাপ, মহৎ ব্যর্থতা। তুচ্ছ পযসা দিয়ে কেনা দুধ-কলা দিযে সাপ পোষা অন্যান্য, দুর্ভাগ্য ! —শরীরের রক্ত খাইয়ে সাপ পোষা কত বড়ো অন্যায়, কত বডো দুৰ্ভাগ্য ? আবার, এই শোচনীয় কৌতুক একমাত্র মাযোেব অদৃষ্ট । স্বামীব কাছে জীবনের একটি স্মৃলিঙ্গ ভিক্ষা পেযে তিল তিল কবে বাড়িযে জননীকেই জ্বেলে দিতে হবে একটি সম্পূৰ্ণ জীবনেব চুল্লি-যদি সে চুল্লিতে জগতের কল্যাণে যজ্ঞ করা যায় গৌরব জননীব, যদি তাক আগুনে গৃহদাহ হয় কলঙ্কও জননীব। মায়ের দায়িত্ব এত বড়ো ভাই! তাই পৃথিবীব দুটি গলগ্রহ সৃষ্টি করে আজ আমাৰ অসীম অনুতাপ। আমার মাঝে মাঝে ভযা হয দেশ আমার সেবা নেবে না। অসূস্থ দেশের মুখে যে দু ফেঁটা বিষ ঢেলে দিয়েছি সে অপরাধ। ভুলবে না। এ চিন্তাব দহে আমাধব শুধু খেপে যাওযা বাকি আছে। ভগবান আজ যদি ওদেব কাছে টেনে নেন, তবে বোধ হয-—তবে বোধ হয----- ভগবানের নাম নিযে মার মুখে সন্তানেব মৃত্যুকামনা। এই অস্বাভাবিক ভীষণ মহত্ত্বে আমি চমকে গেলাম। নিজের অসমাপ্ত উক্তির প্রহাবে সেও কেঁদে ফেলল। আমি বুঝলাম এ কান্নার অর্থ কী। অভিশাপের প্রত্যাহাব। মুখেব কথা নয়, ভগবান যেন মনের কথাটাই কানে তোলেন এই নিবেদন । সূর্যালোকে নদীতে ঢেউগুলি চমকাচ্ছিল, তীর ঘেঁষে চলেছিল একটি পানসি। বুডো মাঝি লগি ঠেলছে, ছেলে কোলে একটি মেয়ে তীরের শোভায় মুগ্ধ হযে বসে আছে, একটি দুরন্ত ছেলের হাত শক্ত করে ধবে। কিছু দূরে নদীব বাঁক, সে পর্যন্ত আমি নীেকোব জননীটিকে অনুসরণ কবলাম। ততক্ষণ কাছেব জননী শান্ত হয়েছে। বললাম, এ ভাবে চাবমে উঠলে আমাদেব আলোচনা আপনা থেকে বন্ধ হয়ে যাবে। সে স্নান হেসে বললে, চরম কীর্তির আলোচনায চরমে না উঠে উপায় ? বললাম, তুমি শুধু ইঙ্গিত কর, বাকিটা আমি অনুমান কবব। নরকের অন্ধকাব আর স্বগের জ্যোতি টেনে আনলে দুটােই চােখকে খোঁচা দেবে, অসুস্থ কববে। আমরা পৃথিবীর মানুষ আমাদেব মাঝামাঝি রফ হওয়াই ভালো । ভীর। বলে সে হাসবার চেষ্টা করলে। আমি বললাম, নিঃসন্দেহে। কিন্তু আর সমালোচনা নয়। যত রেখে ঢেকেই বল অপমানিত হব। তোমার কথাই হোক। তুমি যা বললে তাতে একটা প্ৰকাণ্ড মুশকিল আছে। বোধ হয় সে মুশকিলের অবসানও নেই । কী মুশকিল ? আমার মতো ভীরু অকৰ্মণ্য থেকে আরম্ভ করে তোমার ছেলেদের মতো চোর-ছাঁচোড়কে জন্ম দিতে সবাই যদি তোমার মতো অস্বীকার করে, দেশের সূতিকাঘরের সাড়ে তিনদিকের দেয়াল ভেঙে পড়বে। দেশটা তখন জন্মাবে কোথায় ?