পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী মামি S( পরাশর বলে, আগে বিয়ে হোক, এখানে এক বছর হনিমুন করতে পারি। এই গাঁয়ে বসে এক বছল। কোর্টশিপ চালানো আমার দ্বারা হয়ে উঠবে না। তুমি কিছু বোঝা না। তোমার সঙ্গে মিশেই আমার বুদ্ধি ভেঁাতা হয়ে যাচ্ছে। অনিন্দিতা নকল নিশ্বাস ফেলে বলে, সেকালের মেয়েরাই ছিল সুখী। কারও মুখের কথায় নির্ভর করে মরতে হত না। সাতটা সমুদ্র তেরোটা নদী আব্ব সাতশো রাক্ষস তাদের পক্ষ হয়ে এমন প্রমাণই আদায্য করে নিত, একালের সাইকলজিও যা পারে না। একালের ছেলেগুলি সমুদ্রে পাড়ি দেয় শুধু ডিগ্রির জন্য। কপাল কী আমাদের ফুটাে হয়েছে এমনি! কথ্য-ভাষায় অনিন্দিতাব দখল থাকার জন্য কথাগুলি পরাশরের মর্মে গিয়ে বেঁধে । তোমার কপাল ফুটো হয়েছে। গাছ থেকে পড়ে। আমি ফেলেও দিইনি। অনিন্দিতা বলে, না। তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমে ধরে তুলেছিলে। আর সেই আঠেরো বছর বন্যাসে পাকা রাক্ষসের মতো শূন্যে খেয়েছিলে আমার ফুটো কপালের বক্ত। তুমি মবে গিয়েছিলে ভেবে চুমু খাচ্ছিলাম। তোমার আশেপাশে থাকলে আমাকে অমর হতে হবে। পরাশর তাব সমস্ত আভিজাত্য ভুলে চাপা গলায় ধমক দিযে বলে, অমর হয়ে তুমি যদি সাবাজীবন তপস্যা কবো, আর মরে মরে আমার পাঁচশো জন্ম কেটে যায়, তবু আমার ধারে কাছে থাকবাব সুযোগ তুমি পাবে না আনি । কোকিনদে পা দিয়ে ওদের ব্যাপারটা তলিযে বুঝে শিপ্রা খুশি হয়ে উঠল। বুদ্ধিটা তার যেন অকস্মাৎ অত্যন্ত তীক্ষ হয়ে গেল। একটা বাত্রি সে এমন নিবিড়ভাবে চিন্তা করল যে তার ভালো शुभ ३6ी भी ! পরদিন থেকেই এই নিরীহ কোকািনদ গ্রামটিতে সে তাব শহরটি রচনা করে নিল। এমন অকস্মাৎ সে গ্রাম ও গ্রাম্যতার বিরুদ্ধে তাঁর আশ্চর্য বিদ্রোহ শুরু করে দিল যে অনিন্দিতার বাড়ির মেয়ে ও পুরুষ গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতা চমকে গেল। আজকালকার দিনে এমন গ্রাম খুব কমই আছে যার দু মাইল পরিধিবি মধ্যে দুটাে-একটা গোল্ডফ্রেক সিগারেটের দোকান নেই। গ্রামের বুকে শহরের আকস্মিক আবির্ভাবে ভড়কে যাবার পাত্র একালের গ্রামবাসী নয়। তারা টিউবওযেলের জলে চা তৈবি করে খায়, মাথার উপর দিয়ে এরোপ্লেন উড়ে গেলে চোখ তুলে একবার তাকিয়ে দেখেই কাস্তে ধরে ধান কাটে। কিন্তু শিপ্রাকে ঘিরে এ যে কোন দেশি শহর গড়ে উঠল। কেউ তা ভেবে পেল না। মাটির পৃথিবীতে মাটির মানুষ যে সব শহর রচনা করে শকুরে হয়েছে সে সবের সঙ্গে শিপ্রার যেন যোগ নেই। সে যেন আকাশের পরি, কাল বিকালের ঝড়বৃষ্টিতে আকাশ থেকে খসে পড়েছে। শিপ্রার শাড়িসম্পদ ছিল প্রচুর। সকালবেল প্যারাসোল হাতে পরি সেজে সেই যে সে বেড়াতে যায়, সারাদিন কয়েকবার বেশপরিবর্তন করলেও তার বেশে পরিত্বের ছাপ কখনও ঘোচে না। তার চলার ভঙ্গি, তার কথা ও হাসি, তার নাওয়া ও খাওয়া এবং বিশ্রাম সমস্তই এমন অসাধারণ ও অস্বাভাবিক হয়ে যায় যে তাঁর শরীরটা মেয়েমানুষের রক্তমাংসে তৈরি কিনা সে বিষয়ে অনেকের সন্দেহ জাগে। প্ৰাণের প্রাচুর্যে সে যেন ফেটে পড়তে চায়, কী করবে দিশে পাচ্ছে না। গ্রামে পা দেবার সাতদিনের মধ্যেই পূজার ছুটিতে যে কটা কলেজের ছেলে বাড়ির দুধ-ভাত খাবার জনা গ্রামে এসেছিল তাদের একত্র করে সে আডিডা দেয়, গান শোনায়, নাচ দেখায়, আর আজ একে কাল ওকে নিয়ে অনভ্যস্ত লোকেরও বোধগম্য হয় এমনিভাবে ফ্লার্ট করে। সাতবছরের মেয়ের অপরিমেয় চঞ্চল উল্লাসে পরাশরের চোখের সামনে ওদের সঙেগ সে গ্রামের পথে রেস দেয়, গৃহে পরাশরের