পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী মামি Sbrሞ খবর সব মানুষ রাখে না , তুচ্ছ কোনো উপলক্ষে হঠাৎ একদিন সেগুলো মানুষকে চিন্তিত কবিযা তোলে, বিচলিত করিয়া দেয। শঙ্করের জীবনেও এমন কিছু ঘটিয়াছে মনে হইয়াছিল। উপলক্ষটাও কিছু কিছু সে অনুমান করিতে পারিয়াছিল বইকী! সে যে শঙ্কবের অশান্তির বহিঃপ্রকাশ এ কথা কিন্তু কল্পনা করাও চলে নাই। অথচ নিদারুণ অশান্তিতেই যে তার দিন কাটিতেছিল, আজ আর তাহাতে সংশয় করা যায় না। এখানে কি মানুষ বঁচিতে পারে যে, সাধা করিয়া অকারণে এখানে সে বাসা বাধিয়াছে! বেশি। দিন হয় নাই, কত টাকা খরচ করিয়া বাগান-ঘেরা ছবিব মতো বাড়ি কিনিয়াছিল, বিলাসেব আয়োজনের কোনো অভাব রাখে নাই। শহরের সব রকম সুখসুবিধা সে সেখানে লাভ করিত, শিক্ষিত মার্জিত নরনারীর সওগ পাইত, হাঁসি ও সংগীতে সুমধুর সন্ধ্যা যাপন করিত। আর পাইত কেতকীর ভালোবাসা। এখানকার এই শীর্ণ সন্ত্রস্তা কেতকীব ভালোবাসা নয, সে তখন ছিল হাস্যমুখী কল্যাণী বধু। সেই জীবন পিছনে ফেলিয়া আসিয়া অকারণে শঙ্কৰ এখানে তাহার সমাধি খুজিয়া নেয় নাই। আগাছগ কাটাইয়া ইটের স্তুপ সরাইয়া ঘর কখানার একটু সংস্কার করিবার ইচ্ছারও তার এখন অভাব। আধুনিকতম আবেষ্টনী হইতে ছুটিয়া আসিয়া ধূলিসাৎ শতাব্দীর গৌরবে সে মুখ গুজিয়া দিয়াছে। শািকবের সঙ্গে শেষ দেখা হওয়াব দিন সে যে কাণ্ড করিয়াছিল, তাহাতেই তাহাকে পাগল মনে হইয়াছিল, কিন্তু ইহাব তুলনায় সে পাগলামি কত তুচ্ছা! সে রাত্রির কথা তোমার মনে আছে কেতকী ? কোন রাত্রিব কথা ? শঙ্করের অসুখ হযেছিল, বিছানাব দু পাশে বসে আমরা রাত জেগেছিলাম ? পড়ে বইকী মনে। সে অসুখ তো আর ভালো হল না। দুমাস ছটফট করে পাগলের মতো এখানে ছুটি এল। পৰদিন তোমাব জাপান যাবাব কথা ছিল। অনন্ত চিন্তিতভাবে বলিল, হঁয়া। শঙ্কর ঘুমোলে বিদায় দিতে তুমি আমার সঙ্গে গেট পর্যন্ত এসেছিলো। কী সব অদ্ভুত কাবণ দেখিয়ে চিঠি লিখতে বারণ করেছিলে এখনও স্পষ্ট মনে আছে কেতকী। বাকি রাতটুকু শঙ্কৰ ঘুমিয়েছিল ? এতদিন পবে কী প্রশ্ন! মাথা নাডিয্যা কেতকী বলিল, না। ফিরে গিযে দেখি বিছানায় উঠে বসে নিজেই কপালে বরফ ঘ'ষয়ছে। খুব ধীরে ধীবে হাঁটিলেও এতক্ষণে তারা ঘরের কাছাকাছি আসিয়া পড়িয়াছিল। অনন্ত গলা নামাইয়া বলিল, সেদিন হঠাৎ ওর কী হয়েছিল আজও ঠিক বুঝে উঠতে পাবি না কেতকী। কেতকী বলিল, মাথাব্য মধ্যে ভূমিকম্প হযেছিল। দুয়ারের কাছে দাঁড়াইয়া অনন্ত যেন ঘরের ভিতরের দৃশ্যটা চোখে সহাইয়া নিতে লাগিল! দারিদ্র্যাকে ঘরের মধ্যে সযত্নে বরণ করিয়া নেওয়া হইয়াছে। প্রত্যেকটি জিনিস যেন অভিনয় করিতেছে।--দারিদ্রোর। তক্তপোশে কম্বলের শয্যা-কািন্সলটা পুরু, শালের মতো দেখিতে এবং সম্ভবত খুবই কোমল। ঘরের মাঝখানে বেতের একটি ক্ষুদ্র কোঁচ। মেঝে জুড়িয়া ছেড়া বিবৰ্ণ গালিচা পাতা, শঙ্করই হয়তো একদিন যাহা তিন-চারশো টাকায় কিনিয়াছিল। উত্তর দিকের দেওয়াল ঘোঁসিয়া কপটভাঙা একটা আলমারি বোঝাই বই। খন্দরের মোটা চাদর গায়ে জড়াইয়া এক প্রান্তে কাপেটের আসনে সিধা হইয়া বসিয়া পুস্তক পাঠ করিতেছে স্বয়ং শঙ্কর। ছোটাে করিয়া চুল ছটিয়া মাথার পিছনে সে স্কুল শিখা রাখিয়াছে, কপালে আকিয়াছে রক্তচন্দনের স্বস্তিক।