পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী মামি > brs তা জানি। করে কি জােন? রাত্রে উঠে এসে জানালা দিয়ে আমায় দেখে যায়। আমি বেঁচে আছি। এইটুকু জানলেই যেন ওর ভয় কমে! অনন্ত শঙ্কিত হইয়া বলিল, রাত্রে ও একা থাকে না কি ? থাকে বইকী, ওর মহল যে ভিন্ন। অনন্ত বুঝিতে না পারিয়া বলিল, মহল কী? শঙ্কর আশ্চর্য হইয়া গেল,—মহল জান না!—আচ্ছা, বলি তোমায় বুঝিয়ে। এ চৌধুরী’ ংশের কেউ কোনোদিন স্ত্রীর আচিল পেতে ঘুমোয়নি ভাই, সে দীনতা এ বংশের রক্তে নেই। নিজের মহলে এ বাড়ির বউ প্ৰদীপ জ্বেলে রাত কাটিয়েছে চিরদিন-স্বামী খুশি হলে দর্শন দিয়েছে, খুশি না হলে দেয়নি। অনন্ত গম্ভীবিভাবে বলিল, স্ত্রীকে ভালোবাসা এ বংশের রীতি নয়—না ? নাঃ, বলিয়া শঙ্কর হাসিল—মেয়েমানুষকে আমরা জয় করি, তার সঙ্গে হৃদয়-বিনিময়ের কারবার করি না। জান, আমার এক পুর্বপুরুষ রাজা ছিলেন। নিজের হৃদয়ে রাজত্ব করতে না পারলে আর রাজবংশে জন্মানো কেন ? সাবান ও ভয়ালে দিতে কেতকী যে দুয়ারের কাছে আসিয়া দাঁড়াইয়াছিল, কেহই তাহা লক্ষ করে নাই। নজব পড়িতে শঙ্কর একটু দমিয়া গেল। কেতকী মৃদুস্বরে বলিল, নিজের হৃদয়রাজ্য থেকে কী রাজস্ব তুমি বৎসরান্তে সংগ্ৰহ কর শুনতে পাই কি ? শঙ্কর নবম সুরে বলিল, শুনলে বুঝি আমার কথা সব ? না, সব শুনিনি। যেটুকু শুনেছি। তাই ঢের। একটা কথা তুমি জেনে রেখো, যে রাজ্যে শুধু বালি ধুধু করছে, তার অধিকাব নিয়ে মেয়েমানুষ মারামারি করে না।—সে আপন মনে একটু হাসিল। শঙ্করকে কঠিন কথা বলিতে পারিলে সে যে তৃপ্তি পায়, অনন্তর কাছে তাহা আর গোপন রহিল না। এ যেন তাবই দুৰ্গতি এমনি ব্যথা বোধ হয়। শত্ৰুকেও আঘাত করা চিরদিন কেতকীর আয়ত্তাতীতই ছিল, নিজের স্বামীকে ঘা দিয়া সে আজ হাসিতে পারে! অনন্ত একটা নিশ্বাস চাপিযা গেল। কেতকী অনন্তকে উদ্দেশ করিয়া বলিল, বালতির কাছে সাবান আর তোয়ালে রইল। মুখ-হাত ধোবে এসো। তোমার সুটকেসের চাবিটা দাও, কাপড়-জামা বার করে দি। চাবি নিয়া কেতকী চলিয়া গেলে শঙ্করের দুই হাতের দশটা আঙুল সজোরে পরস্পরকে অাঁকড়াইয়া, ধরিল। হতাশভাবে সে বলিল, দেখলে অনন্ত! চোখ রাঙিয়ে চলে গেল, ধমক দিতে পারলাম না। দেখলে ! অনন্ত চুপ করিয়া রহিল। স্ত্রীর কড়া কথা চুপচাপ সহ্য করলাম! তারা! তারা: কী লজ্জাই আমার কপালে লিখেছিলি মা ? একটা অদ্ভুত স্তব্ধতার মধ্যে সন্ধ্যা নামিয়া আসে। পুবের জানালার শিক ধরিয়া কেতকী বহুক্ষণ নিশ্চল নির্বাক হইয়া দাঁড়াইয়া থাকে। যে গ্রামের ভিতর দিয়া এখানে আসিতে হইয়াছিল তার চেয়ে কাছে বোধ হয় অন্য গ্রাম আছে, অনেকগুলি কুকুরের ডাক অস্পষ্ট শুনিতে পাওয়া যায়। বিকালে যে ঠান্ডা বাতাসটি বহিতেছিল। হঠাৎ কখন তাহা একেবারে বন্ধ হইয়া গিয়াছে খেয়াল থাকে না। মনের মধ্যে শুধু পাক খায় শৃঙ্খলাহীন অবাস্তব চিন্তা।