পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী YGSo দেখবি বউ ? এই দ্যাখ---- এবার স্বর চিনিতে পারিয়া কম্পিত্যকণ্ঠে শ্যামা বলিয়াছিল, ঠাকুরঝি ? মন্দাকিনী আলোটা উচু করিয়া ধরিয়া বলিয়াছিল, আর ভাবনা কী বউ ? ভালোয় ভালোয় সব উতরে গিয়েছে। খোকা লো, ঘর-আলো-করা খোকা হয়েছে তোর। মাথা তুলিয়া একবার মাত্র খানিকটা রক্তিম আভা ও দুটি নিমীলিত চোখ দেখিযা শ্যামা বালিশে মাথা নামাইয়া চোখ বুজিয়াছিল। শ্যামার যে সব বিষয়েই বাড়াবাড়ি ছিল তাহা নিঃসন্দেহ। পরদিন সকালেই সে তাহার প্রথম ছেলেকে ভালোবাসিয়া ফেলিয়াছিল। অনেক বেলায় ঘুম ভাঙিয়া নিজেকে শ্যামার অনেকটা সুস্থ মনে হইয়াছিল। ঘবে তখন কেহ ছিল না। কান্ত হইয়া শুইয়া পাশে শায়িত শিশুর মুখের দিকে এক মিনিট চাহিয়া থাকিয়াই তাহার মনে হইয়াছিল ভিতরে একটা অদ্ভুত প্ৰক্ৰিয ঘটিযা চলিবার সঙ্গে সঙ্গে ছেলের মুখখানা তাহার চােখে অভিনব হইয়া উঠিতেছে। কতটুকু মুখ, কী পেলাবত মুখের! মাথা ও ভুরুতে চুলের শুধু আভাস আছে। বেদানার জমানো রসের মতো টুলঢ়লে আশ্চর্য দুটি ঠোট। এ কী তার ছেলে ? এই ছেলে তার ? গভীর ঔৎসুক্যে সন্তৰ্পণে শ্যামা হাত বাডাইযা ছেলের চিবুক ও গাল ছুইয়াছিল, বুকেবা স্পন্দন অনুভব করিযাছিল। এই বিচ্ছিন্ন ক্ষীণ প্ৰাণস্পন্দন কোথা হইতে আসিল ? শ্যামা কঁপিয়াছিল, শ্যামার হইয়াছিল। রোমাঞ্চ । স্নেহ নয়, তাহাব হৃদয় যেন ফুলিযা ফাঁপিয়া উঠিয়া তাহার কণ্ঠরোধ কবিয়া দিতে চাহিয়াছিল। প্রসবের পর নাড়িসংযোগ বিচ্ছিন্ন সন্তানের জন্য এ কী কাণ্ড ঘটিতে থাকে মানুষের মধ্যে ? আশ্বিনের প্রভাতটি ছিল উজ্জ্বল। দুদিন দুরাত্রির মবণাধিক যন্ত্রণা শ্যামা দুঃস্বপ্নের মতো ভুলিযা গিয়াছিল। আজ সকালে তাহাব আনন্দোব সীমা নাই। তখন ঘটি যাছিল এক কাণ্ড । ঘুম ভাঙিযা হঠাৎ শিশু যেন কীরকম করিতে আরম্ভ কবিয়াছিল। টানিয়া টানিয়া শ্বাস নেয, চঞ্চলভাবে হাত পা নাডে, চোখ কপালে তুলিয়া দেয়। ভয়ে শ্যামা বিবৰ্ণ হইয়া গিয়াছিল। ডাকিয়াছিল, ঠাকুরঝি গো, ও ঠাকুরঝি! রান্না ফেলিয়া ছুটিযা আসিয়া ব্যাপার দেখিয়া মন্দা হইয়াছিল বাগি আগুন । চোখ নেই বউ ? সরো তুমি, সরো। গলা শুকিয়ে এমন করছে গো, আহা! মধুর বাটি গোল কোথা ? মিছবির জল ? দিয়েছ তো উলটে প। আশচযি ! তাকের উপব শিশিতে মধু ছিল। ছােটাে একটি বাটিতে মধু ঢালিযা আঙুলে করিয়া ছেলের মুখ ভিজাইয়া চোখের পলকে মন্দা তাহকে শান্ত করিয়া ফেলিয়াছিল। বিড়বিড় করিয়া বলিয়াছিল, আনাড়ি বলে আনাড়ি, এমন আনাড়ি জন্মে চোখে দেখিনি মা! কচি ছেলে, প-কে পলকে গলা শুকোবে, তাও যদি না টেব পাও তবে মা হওয়া কেন ? দাই মাগিও মানুষ কেমন, তামাকপাত আনতে গিয়ে বুড়ি হল। এই তুচ্ছ ঘটনাটি শ্যামার মনে গাথা হইয়া আচে, প্রথম সন্তানকে সে সে বারোদিনের বেশি। বঁাচাইতে পারে নাই তার সবটুকু অপরাধ চিরকাল শ্যামা নিজের বলিয়া স্বীকার করিয়া লইয়াছে, সন্তান পরিচর্যার কিছুই সে যে তখন জানিত না এই ঘটনাটি শ্যামার কাছে হইয়া আছে তাহার আদিম প্রমাণের মতো। তখন অবশ্য সে জানিত না বারোদিন পরে পেট ফুলিয়া ছেলে তাহার মরিয়া যাইবে। মন্দা চলিয়া গেলে ছেলের দিকে চোখ রাখিয়া সে শান্তভাবেই শুইয়াছিল, গলা শুকানোর লক্ষণ দেখা গেলে মুখে মধু দিবে। অন্যমনে সে অনেক কথা ভাবিয়াছিল। দরজা দিয়া দুটি চড়াই পাখি ঘরে ঢুকিয়া