পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in SS8 মানিক রচনাসমগ্র কেতকীব মুখ বিবৰ্ণ হইয়া গেল। অস্ফুটস্বরে সে বলিল, সেই জন্যে মারলে ? তবে যে বললে সাপ মারতে হয় বলেই--- সাপ মারতে হয়, কিন্তু ইট দিযে আমি সাপ মারি না কেতকী। বিপজ্জনক অভ্যাস। লাঠি খুজি । সেই অবসরে সাপ যদি পালায় একটু দুঃখিত হই না। তবে ? আজি কী জনো এমন করলো? কী বুঝেছি তুমি ? লন্ঠনের আলোর ব্যাপ্তি আর কতটুকু, চারিদিকের গাঢ় অন্ধকারের হিংসায এ যেন ক্ষুদ্র অক্ষম ভালোবাসা। অনন্ত কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। তারপর ধীরে ধীরে বলিল, আমি কিছু বুঝিনি কেতকী। এই ভাঙা বাড়ির প্রেম শঙ্করকে কেন পাগল করলে সে কি বোঝা যায়! সাপ আর ইটের স্তুপের জন্য। ওর তো একবিন্দু মমতা থাকার কথা নয়! কেতকী সহসা হাসিল, না, তা থাকার কথা নয। ও আরও অনেকদিন বাঁচতে চায়। অনন্ত বলিল, তা জানি। তাই ওব ঘরে কার্বলিকের গন্ধ পেয়েছিলাম। ঝড়ের সম্ভাবনা দেখলে ও তাই সারারাত মন্দিবে পুজো করে। কেতকী প্রসঙ্গ পরিবর্তন করিল। খাবে চলো। আলোটা দাও, আমি আগে যাই। অনন্ত তাহার হাতে আলো দিল, কিন্তু চলিতে আরম্ভ করিল। তাঁহাকে পিছনে বাখিাষা। বলিল, সাপেব শান্ত বউটি যদি স্বামীহত্যার প্রতিশোধ নিতে চায় আমাব ওপরে নেওয়াই উচিত কেতকী। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি।-- কেতকী বলিল, এ সব অলুক্ষনে কথা বলা কেন ? কাল তুমি ভালোয় ভালোয় ফিরে যেযে বাপ । ঝড় ওঠে। শেষবাত্রে। কেতকী যে বলিয়াছিল। আশ্বিনের ঝড কালরৈশাখীর চেয়ে প্রবল হইতে পাবে, ঝডের প্রথম ঝাপটার পাঁচ মিনিটের মধ্যে তাহার সত্যতা প্রমাণিত হইয়া যায়। অনন্তকে শেষরাত্রে রওনা হইতে হইয়াছিল, সারাদিন গাড়িতে পালকিতে কাটিযাছে। শুইতেও প্রায় বারোটা বাজিযা গিযাছিল। ঘুমাও যেন চোখ ছাড়িয নড়িতে চাহে না অথচ প্রকৃতিব এই তাণ্ডবলীলার মধ্যে ঘুমানোও অসম্ভব। নিদ্রামিশ্রিত নিস্তেজ জাগবণে কিছুই ভালো করিয়া বুঝিতে পারা যায় না, কেমন একটা গুরুভােব আতঙ্ক বুকে চাপিয়া থাকে। চাবিদিক হইতে যেন ভয়ানক একটা বিপদ ঘনাইয়া আসিতেছে, অথচ এমনি অবশ্য অসহায় অবস্থা যে, প্রতিকগরের জন্য আঙুলটিও তুলিতে পারা যাইবে না। কী যেন ঘটিবে,---ঘটিল বলিয়া! এক অজানা শত্রুর বিলম্বিত প্ৰতিশোধ কোন দিক দিয়া যেন আঘাত করিবে। ভিজা মাটির সোদা গন্ধে যেন তাহার হিংসার আভাস মেলে, দেওযালে দেওয়ালে তাহারই সহস্ৰ ব্ৰকৃদ্ধ কালাঘাতের শব্দ শোনা যায়। সহসা প্ৰবল আঘাতে অনন্ত পূৰ্ণমাত্রায় সচেতন হইয়া ওঠে। কতকক্ষণের জন্য তার মনে হয কে যেন সত্যই তাহার বুকে সজোরে মুষ্ট্যিাঘাত করিয়াছে-একটা পাজবও আর আস্ত নাই। নিশ্বাস টানিবার শক্তি খানিকক্ষণ তাহার থাকে না-হাঁ করিয়া আস্তে আস্তে সে হাঁপাইতে থাকে। সামান্য বাতাসটুকু ভিতরে নিতে গিয়াই বুকের পাঁজরগুলো তার টনটন করিয়া ওঠে। অস্ফুটম্বরে সে কাতরাইতে আরম্ভ করিয়া দেয। কিন্তু বেশিক্ষণ ও ভাবে পড়িয়া থাকা যায় না। দেশলাইয়েব সন্ধানে বিছানা হাতড়াইয়া সে অনুভব করে ধুলা ও কঁাকরে বিছানা ভরিয়া গিয়াছে এবং পাশেই পড়িয়া আছে চুনসুরকির চাপড়া লাগানো