পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in Soや মানিক রচনাসমগ্ৰ দিন আগে সরকারদের মেজো-বউ কাপড়ে আগুন দিয়া পুড়িয়া মরিয়াছিল, এখন দরজায় প্রকাণ্ড একটা তালা বুলিতেছে। এদিকে বসন্তদের বাড়ি। বসন্ত বাডির রোয়াকে দাঁড়াইযা বিড়ি টানিতেছিল, কারণ এমনি সময় সেনেদের মেজো-বউ ছাতে কাপড় শকাইতে দিতে আসিযা পথের দিকে আলিসায় ভর দিযা একটু দাঁড়ায । বসন্ত হাঁকিল, মুকুল যে!-—এই গাড়োয়ান, রোকো রোকো। বসন্ত গাড়ির কাছে নামিয়া আসিল। সে বসন্ত আর নাই। তার রং গ্রীষ্মকালেব তৃণের মতো হইয়া গিয়াছে। মুকুলের গাড়িব গাড়োয়ানের মতো তাহার ঘাড় ছাঁটা, চোখে মদের রং। সিলোন থেকে আসছ ? বন্ধুকে তুই সম্বোধন করিবার সাহসও বসন্ত হারাইয়াছে। মুকুল সায় দিয়া বলিল, হঁ্যা। কেমন আছ বসন্ত? চলে যাচ্ছে একরকম! বলিযা বসন্ত একটু নিস্তেজ হাসি হাসিল। মনটা কীরকম করিতে লাগিল মুকুলের। হাসি গল্প আডিডা দিয়া অর্ধেক জীবন যার সঙ্গে মন খুলিয়া হইহই কবিয়াছে, আজ তার সঙ্গে শুধু ভদ্রতাব সম্পর্ক। পথের দিকে কেহই তাকাইয়া ছিল না। বেলা বারোটা বাজিয়া গিয়াছে, ছেলেমেয়েবা ক্ষুধার্য কাতর। তাহদের ভাত না দিয়া উপায় ছিল না। সাত-আটটি ছেলেমেযেকে খাওয়ানো শশীমুখীর একাব কাজ নয়, ননদ বাসতী তাহার সাহায্য কবিতেছে। ছেলের আসিতে দেরি দেখিয়া মা তাড়াতাডি স্নান করিয়া ফেলিয়া তাড়াতাড়ি সন্ধ্যাটা সারিয়া নিতে বসিয়াছেন, —সময়মতো স্নান না কবিলে তার মাথাব তালু জ্বলে। ছােটাে মাসির পায়ের বাতে তেলমালিশ এখনও শেষ হয় নাই। সুতরাং পথে চোেখ পাতিয়া বসিয়া থাকিবার অবসর কাহারও ছিল না। চারুর জ্বর। সে বিছানায় পড়িয়া আছে। মুকুল উঠানে আসিয়া দাঁড়াইতে একটা হইচই পড়িয়া গেল। মাসি বারান্দায় পা ছড়াইয়া পাঘে। তেল মালিশ করিতেছিলেন, তিনি বলিলেন, মুকুল এলি ? বাসন্তী ভাতের থালা নামাইয়া রাখিয়া বলিল, ওমা দাদা এসে পড়েছে! ছেলেদের মধ্যে বাসন্তীর বড়ো ছেলে সকলের বডো, মামাকে তার স্মরণ ছিল, আকস্মিক উত্তেজনায় খেপিয়া গিয়া গলা ফাটাইয়া সে হাকিল, দিদিমা, শিগগিব৷ এসো, a st শশীমুখী রান্নাঘরে গিয়া লুকাইল। কিন্তু সমারোহের ইতি ওইখানেই। ছেলেমেয়েরা খাওয়া ফেলিয়া মুকুলকে ঘেরিয়া দাঁড়াইল না, এখনও তাঁহাদের পেট ভরে নাই। মাসি সমানে পাযে তেল মালিশ করিতে লাগিলেন, মা ছুটিয়া নীচে নামিয়া আসিলেন না, চারু জ্বরের ঘোরে। যেমন ছটফট করিতেছিল। তেমনি ছটফট করিতে লাগিল, স্টেশনে যাওয়ার পরিশ্রমে কাতর বাসন্তী এটাে হাত সাবধানে ধুইয়া ঘর হইতে একটা চেয়ার আনিয়া রাখিল। মুকুলকে প্ৰণাম করিয়া বলিল, বসো দাদা। মুকুল বসিলে— হঁ্যা দাদা, মেম-টেম বিয়ে করে আসনি তো ? সিলোনে মেম কী রে ? বাসন্তী অপ্রতিভ হইয়া বলিল, জাহাজে যেতে হয় যে?