পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in SS8 মানিক রচনাসমগ্ৰ আমার কথা বাদ দিন। শরীর ভালো থেকেই বা কী হবে! ডাক্তার চ্যাটার্জি এসেছিলেন, রক্ত নিয়ে গেছেন। ওষুধও লিখে দিয়েছেন, জ্ঞান হলে একদাগ খাওয়াতে হবে। আমার জন্য কিছুই করার রাখেননি দেখছি। ডাক্তারের ভিজিট ? লাগেনি। উনি আমাদের বন্ধু। তবে পীডাপীডি কবব না। কিন্তু আপনার চা খাওয়াব সময় পাব হয়ে গেছে, আপনি এবাব ছুটি নিন। হিমানী ব্যাকুল হইয়া বলিল, না, না, আমায় ওঁব কাছে থাকতে দিন। চা এখানেই দিয়ে যাবে। লণ্ঠনটা নতুন, ধোঁয়া হয় না, কিন্তু কমানো রহিয়াছে বলিয়া আলো অনুজ্বল। এই আলোতেই হিমানীর মুখখানা যেন স্পষ্টতর দেখাইতেছে। সেদিকে চাহিয়া থাকিয়া শঙ্করের মনে হইল আপিস যাইবার সময় সে কি কল্পনাও করিতে পারিষাছিল যে ফিরিয়া আসিয়া গৃহে এমন দূর্ভাবনা ও এত বড়ো বিস্ময় সঞ্চিত থাকিতে দেখিবে। হিমানীর আজকাব ব্যবহার অদ্ভুত। চার বছরের প্রতিবেশী। ইহারা কিন্তু গরিব প্রতিবেশীকে কবে কতটুকু আমল দিয়াছিল? সংবৎসরে হিমানী ও বিধুর মধ্যে একটি বাক্যবিনিময়ও হইয়াছে কিনা সন্দেহ। আর আজ নিজে হইতে আসিযা এমন সেবাই আরম্ভ করি যা দিয়াছে যে প্রয়োজন শেষ হইলেও উঠিযা যাইতে চায় না। টাইমপিসটায় দশটা বাজে। বেলা একটা হইতে একভাবে বিধুব শিয়রে বসিয়া আছে তিন-চাব বাব নিজে ডাকিতে আসিয়া একরকম ধমক খাইয়াই সুকান্ত ফিরিয়া গিয়াছে, কেরানির কুশ্রী বধুর সেবাব জন্য ধনীর তরুণী প্রিযাব এ কী লোলুপতা! মহত্ত্ব সন্দেহ নাই, উদারতারই পরিচম, কিন্তু কী অস্বাভাবিক ! আধঘণ্টা পরে সুকান্ত আবাব আসিল। কোনো কথা না বলিয়া গম্ভীব মুখে চুপ কবি যা দাডাইম রহিল। অসীম কুণ্ঠার সঙ্গে শঙ্কর মিনতি করিয়া হিমানীকে বলিল, আর তো দরকার নেই, এবার আপনি যান। কতক্ষণ এ ভাবে ঠায় বসে থাকবেন ? অপ্রত্যাশিতভাবে এবার কিন্তু প্ৰতিবাদ আসিল সুকান্তর নিকট হইতে—থাক শঙ্করবাবু, কিছু বলবেন না, একেই সেবা করতে দিন । অবাক হইয়া শঙ্কৰ বলিল, কিন্তু— সুকান্ত মাথা নাডিল—কিন্তু নয। বাড়ি গিয়ে ছটফট করার চেযে এখানে শান্তিতে থাকা ভালো। আমােব। যদি একটু বসবাব ব্যবস্থা করে দেন ওর সেবা করাটা দেখতে পাবি। মেঝেতে মাদুর বিছাইয়া দিয়া ঘুরিয়া দাঁড়াইতেই শঙ্কর দেখিল হিমানী কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে চাহিয়া আছে। সুকান্ত একপ্রকার দুর্বোধ্য হাসি দিয়া সে দৃষ্টিকে নন্দিত করিল, তারপর ঘরের চারিদিকে একবার চোখ বুলাইয়া গভীর হইয়া বসিয়া রহিল। খাদ্য আসিয়াছিল সুকান্তল বাড়ি হইতে। ছেলেমেয়েরা খাইয়া ঘরের এককোণে ক্ষুদ্র বিছানায় জড়সড় হইয়া ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। শঙ্কর বিছানার পাশে মাটিতে বসিল। বুকের ভিতর চাপবাধা দুর্ভাবনা। তবু হঠাৎ তাহার যেন হাসি পাইল। ঘরে আজ দুইজোড়া স্বামী-স্ত্রী জড়ো হইয়াছে কিন্তু জোডায় জোড়ায় কী অসীম পার্থক্য! শয্যায় পড়িয়া আছ চামড়া-ঢাকা একটা কঙ্কাল, বাসররাত্রিতেও যাব ওষ্ঠে মধুর বদলে জুটিয়াছিল দাঁতের ফঁাকে ফঁাকে পচা খাদ্যকণার দুৰ্গন্ধ, আজ সাত বছরের বেশি যে তাতার মনকে উপবাসী রাখিয়া দুবেলা যোগাইয়াছে শুধু রাধা ভাত। তিনটি পেটমোটা শিশুর শিয়ারে বসিয়া আছে একটা কলেপেষা জীবন্ত ইক্ষুদণ্ড, জীবনটা যার স্রষ্টা কবির সৃষ্টির খাতায় ভুলিয়া যাওয়া সাদা পৃষ্ঠা। আর বৃগণার শিয়রে যে স্ত্রীটি বসিয়া আছে, যে স্বামীটি