পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী মামি ܓ ܓ )? তার উপরে কুণ্ডলী পাকাইয়া শুইয়া আছে। পশুপতির ভিজানো সাগু মাঝে মাঝে শক্ত থাকিয়া যায়, তার মাছের ঝোলে মশলা বেশি হয়, তার বলক-তোলা বরাদ্দ দুধ টুকু অর্ধেকেল বেশি সে পায না। রাত্রে সরাসরি কুন্দ নিজের ঘরে গিয়া দরজা দেয়। পশুপতি মাঝের বেড়া ভেদ করিয়া ডাকে, ও কুন্দ ? ও দিদি, শূলি নাকি ? শোন দিদি একবার। কুন্দ ছেলেকে শিখাইয়া দেয়। কেশব হাকিয়া বলে, মা ঘুমিয়ে পড়েছে। পশুপতি খানিক চুপ করিয়া থাকে। তাবপব আবােব বলে, এই তো শুলো, একবাবটি ডাক না। কেশব ? ডাক দাদা ডাক তোর মাকে । কুন্দ আবার ছেলেকে শিখাইযা দেয়। কেশব বলে, মারি জ্বর গো দাদামশায়, ডাকতে মানা করে শুয়েছে। পশুপতি তাবপব চুপ করিয়া যায়। বড়ো শীতল পৃথিবী, বডো প্রাণহীন। হযতো আজ বাত্রে সেও একেবারে শীতল হইয়া যাইবে। এমন তো কত লোকে যায, বিছানায় শূইয়া শীতার্ত আধঘুম-আধা জাগরণের মধ্যে। পঞ্চাশ বছর বয়সেব সময পশুপতির ছেলে বৰ্মা পালাইয়াছে, সাতান্ন বছর বয়সেব সময় মরিযাছে তার বউ। আজ ত্ৰিশবছর ধরিয়া এমনি নিঃসঙ্গ অন্ধকাবে পশুপতি আরও নিঃসঙ্গ আবও গাঢ় অন্ধকারের প্রতীক্ষা করিয়াছে। ও ঘরে ছোটো ছেলেটা কঁাদিয়া উঠিলে কোনো জাগ্রতা মাতার আদরে হঠাৎ তাব কালা থামি যা যায় পশুপতির বুঝিতে বাকি থাকে না। কিন্তু কুন্দকে আর সে ডাকে না। বরফের মতো শীতল নির্বোিধ পা দুটি হইতে দেহের দিকে জমজমাট মৃত্যুর ক্ৰমিক অগ্রগমনে বাধা পড়ায় কষ্টে লেপ কঁথা সরাইয়া লাঠি খুজিয়া সে চৌকির নীচে নামে। উবু হইয়া বসিয়া লাঠিটা পাঠাইয়া দেয়। চৌকির তলে সেইখানে, যেখানে তার টিনের তোরঙ্গটি আছে। লাঠি দিয়া নানাভাবে পরীক্ষা কবিয়া তোরঙ্গটির অস্তিত্বে সে নিঃসন্দেহ হয। তারপব প্ৰাণপণ চেষ্টায আবাব চৌকিতে ওঠে { তখন ঈশ্বরকে পশুপতির মনে পড়ে। পৃথিবীর আর কারও ঈশ্ববেক সঙ্গে পশুপতিক ঈশ্বকেব মিল নাই। অনাদি অনন্ত কোনো কিছুকে মনে আনিবার চেষ্টা করিলে মাথা বোধ হয় তার ফাটিযা যাইবে, সাধাবণ মানুষ সীমাহীনকে যে অনুভূতি দিয যতটুকু উপলব্ধি করে ততটুকু জোরালো অনুভূতিও পশুপতির নাই। তার ভাবিবার শক্তি ক্ষীণ, অনুভূতি দুর্বল। তার ঈশ্বব একটা নিববিচ্ছিন্ন অন্ধকারে খানিকটা আলো মাত্র । যে আলোকে একদিন সে দুচােখ দিয়া পৃথিবীতেই ঢের বেশি উজ্জ্বল, ঢের বেশি ব্যাপকভাবে দেখিতে পাইত। পশুপতির ঈশ্বর আলোর একটু স্মৃতি মাত্র। কিন্তু তাহা দিয়াই সে তার চিরন্তন ভবিষ্যতের স্বৰ্গ নির্মাণ করিতে পারে। স্বর্গের কামনাও তার এতখানি নিস্তেজ হইয়া আসিয়াছে। এ শীতটাও কোনোরকমে কাটিয়া যায়। বসন্তের আবির্ভাবে পশুপতির দেহে মনে জীবনের ক্ষীণতম জোয়ারটিও আসে না বটে, কিন্তু তার অবশিষ্ট ক্ষীণ জীবনটুকুর অপচয় বন্ধ হইয়া যায । কুন্দর অবহেলা সহিতে না পারিয়া তাহাকে শীতের শেষে পশুপতি কয়েকটা টাকা দিয়াছে; কেশবও গোপনে একটা টাকা আদায় করিয়া লইতে ছাড়ে নাই। কুন্দর রাগ অবশ্য এমনি কমিয়া আসিতেছিল, টাকাটা হাতে পাওয়ায় তাড়াতাড়ি কমিয়া গিয়াছে। পশুপতি ডাকিলে এখন সে মাঝে মাঝে সাডা দেয়। পশুপতির সাগু নরম হয়, মাছের ঝোলে মশলা কম থাকে, দুধ কমে না। কেশব দাওয়ার খুঁটি ধরিয়া পাক খায়, তাহার কাছে বসে, দুটাে একটা কাজও করিয়া দেয়। শ্ৰীমস্তের মেয়ে মুখীর বিবাহ হয় ফাঙ্গুন মাসের মাঝামাঝি। বিবাহের দিন বিকাল বেলা কেশবকে দিয়া টিনের তোরঙ্গটির দড়ির বঁাধন খোলাইয়া সেটি পশুপতি চৌকির তলা হইতে বাহিরে আনায । মানিক ১ম-১৫