পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in আত্মহত্যার অধিকার বর্ষাকালেই ভয়ানক কষ্ট হয়। ঘরের চালটা একেবারে ঝাঝরা হইয়া গিয়াছে। কিছু নাবিকেল আর লতা-পাতা মানসম্রাম বজায় রাখিয়াই কুড়াইয়া সংগ্ৰহ করা গিয়াছিল। চালোব উপর সেগুলি বিছাইয়া দিয়া কোনো লাভ হয় নাই। বৃষ্টি নামিলেই ঘলেৰ মধ্যে সর্বত্র জল পড়ে। বিছানাটা গুটািইয়া ফেলিতে হয়, ভাঙা বাকসো-পেটরা কযটা এ কোণে টানিযা আনিতে হয়, জামা-কাপড়গুলি দডি হইতে টানিয়া নামাইয়া পুঁটলি কবিয, কোথায় বাখিলে যে ভিজিবে কম, তাই নিয়া মাথা ঘামাইতে হয । বড়ো ছেলেটা কঁচা ঘুম ভাঙিয়া কঁদিতে আরম্ভ করে। আদর করি যা তাহার কান্না থামানো যায় না, ধমক দিলে কান্না বাড়ে। মেযেটা বড়ো হইয়াছে, কঁদে না , কিন্তু ওদিকের দেয়ালে ঠেস দিয বসিয়া এমন করিযাই চাহিযা থাকে যে নীলমণির ইচ্ছা হয। চড় মারিয়া ওকেও সে কাদাইয়। দেয়। এতক্ষণ ঘুমাইবার পব একঘণ্টা জাগি যা বসিযা থাকিতে হইল বলিযা ও কী চাহনি ? আকাশ ভাঙিযা বৃষ্টি নামি যাছে, ঘরেব চাল সাতবছর মেরামত হয় নাই। ঘবেবি মধ্যে জল পড়াটা নীলমণির এমন কী অপরাধ যে মেয়েটা তাহাকে ও রকমভাবে নিঃশব্দে গঞ্জিনা দিবে ? ছোটো ছেলেটাকে বুকোব মধ্যে লুকাইযা নিভা। একবার এধাব একবার ওধাব করিয়া বেডাইতেছিল। হঠাৎ বলিল, ওগো, ছাতিটা একবার ধরো, একেবাবে ভিজে গেল মো! লক্ষ্মী, ধরে একবাব ছাতিটা খুলে , ওবও কি শেষে নিমুনিয়া হবে ? নীলমণি বলিল, হয় তো হবে। বাঁচবোঁ । নিভা বলিল, বালাই যািট্র-শ্যামা, তুইও তো ধরতে পারিস ছাতিটা একটু ? শ্যামা নীরবে ভাঙা ছাতিটা নিভার মাথার উপর ধরিল। ছাতি মেলিবার বাতাসে প্ৰদীপের শিখাটা কাপিয়া গেল। প্ৰদীপে তেল পুড়িতেছে। অপচয়! কিন্তু উপায় নাই। চাল-ভেদ করা বাদলে ঘর যখন ভাসিয়া যাইতেছে তখনকার বিপদে প্ৰদীপেব আলোব একান্ত প্রয়োজন। জিনিসপত্র নিয়া মানুষগুলি এ কোণ-ও কোণ করবে কেমন করিয়া ? এক ছিলিম তামাক দে শ্যামা। নীলমণি কুকুম দিল। শ্যামা বলিল, ছাতিটা ধরে তবে ? নীলমণি আকাশের বজের মতো ধমকাইয়া উঠিল, ফেলে দে ছাতি, চুলোমঃ গুজে দে। আমি ছাতি ধরব তবে উনি তামাক সাজবেন, হারামজাদি । তামাক অবিলম্বেই হাতের কাছে আগাইয়া আসিল। ঘরের পশ্চিম কোণ দিয়া কলের জলের মতো মোটা ধারায় জল পড়িয়া ইতিমধ্যেই একটা বালতি ভরিয়া গিয়াছে। সেই জলে হাত ধুইয়া শ্যামা বলিল, তামাক আর একটুখানি আছে বাবা। দুঃসংবাদ! এত বড়ো দুঃসংবাদ-প্রদানকারিণীকে একটা গাল দিবার ইচ্ছা নীলমণিকে অতিকষ্টে চাপিয়া যাইতে হইল।