পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননীী SV) মন্দা বলিয়ছিল, আমি কি পাগল বউ গরম জলে তোমার ছেলেকে পুড়িয়ে মারব? শ্যামা বলিয়াছিল, নবম চামড়া যে ঠাকুরঝি, একটু গরম হলেই সইবে না।--জলে হাত দিয়া সে চমকাইয়া উঠিয়াছিল, জল যে দিব্যি গরম গো। জল বুঝি ঠান্ডা হতে জানে না বউ ? ইহার পবেই বিষ্ণুপ্রিয়ার বসিবাব ভঙ্গি অত্যন্ত শিথিল হইয়া আসিয়াছিল। শ্যামার মধ্যে সে যেন হঠাৎ কী আবিষ্কার করিযাছে। আব্ব সে সহজে শ্যামাব সঙ্গ ছাড়িবে না। বাড়ি হইতে বারবার তাগিদ আসিয়াছিল। বিষ্ণুপ্রিয বাড়ি যায় নাই। বসিয়া বসিয়া শ্যামার সঙ্গে রাজ্যের গল্প করিয়াছিল। কয়েকদিন পবে বিষ্ণুপ্রিয়া আবাব আসিফ ছিল। কেহ টেব পায় নাই যে সাস্তুনা দিতে নয়, সে ছেলের জন্য শ্যামার শোক দেখিতে আসিয়াছিল। শ্যামার প্রথম সন্তান বাঁচিয়াছিল বারো দিন । দুই দুবছরের মধ্যে শ্যামাব কোলে আবার ছেলে আসিল! সেই বাড়িতে, সেই ছোটাে ঘরে শরৎকালের তেমনি এক গভীর নিশীথে। কিন্তু মানুষের জীবনে অভাবের পূরণ আছে ক্ষতির পূর্বণ নাই বলিয়া প্রথম সন্তানকে শ্যামা ভুলিতে পারে না। ছেলে মরিয়া যাওয়ার পব কয়েকমাস সে মুহামনা হইয়াছিল, এই অবস্থাটি অতিক্ৰম করিতে তাহার মধ্যে যে পবিবর্তন আসিযাছিল এখনও তাই স্থায়ী হইয়া আছে। সন্তানেব আবির্ভাবে এবাব আবী তাহাব সেই অসংযত উল্লাস আসে নাই, উদাম কল্পনা জাগে নাই। সে শান্ত হইযা গিযছে। সংসারধর্ম কবিলে ছেলেমেযে হয়. ছেলেমেযে হইলে মানুষ সুখী হয়, এবাবের ছেলে হওয়াটা তাহাক কাছে শুধু এই। এতে না আছে বিস্ময, না আছে উন্মত্ততা :- চোখের পলকে একটা বিবাট ভবিষ্যৎকে গডিম! তুলিয়া বহিয়া বেড়ানো, ক্ষণে ক্ষণে নব নব কল্পনার তুলি দিযা এই ভবিষ্যতের গায্যে লং মাখানো, আর সর্বদা ভযে ও আনন্দে মশগুল হইয়া থাকা, এ সব কিছুই নাই। এবাবও আঁতুড়ে এগাবোটি দিবা।বাত্রি অনির্বাণ দীপ জ্বলিয়াছিল, কিন্তু শ্যামার এবার একেবারেই ভয় ছিল না, শুধু ছিল গভীব বিষগ্নতা। এবার পূর্বপুরুষেবা গভীর বাত্রে শ্যামার ছেলেকে ভিড় করিয়া দেখিতে আসেন নাই। ছেলেব ক্ষীণ বক্ষস্পন্দন হঠাৎ একসময় থামিয়া যাইতে পা- শ্যামাব এ আশঙ্কা ছিল, কিন্তু আশঙ্কায ব্যাকুল হইয়া সে জাগিযা রাত কটায নাই। ও বিষয়ে তাহার কেমন একটা উদাসীনতা আসিয়াছে। ভাবিয়া লাভ নাই, উতলা হইঘা লাভ নাই, ধরিয়া রাখিবাব চেষ্টা করিয়া কোনো ফল হইবে না। যিনি দেন, তিনিই নেন। তীব দেওযকে যখন ঠেকানো যায না, নেওয়াকে ঠেকাইবে কে ? সে শীতলকে স্পষ্ট বলিয়াছে ; এবার আবি যতুটতু করব না। বাবু। অযত্ন কথা কি ভালো হবে ? অযত্ন কবিব না তো। নাও যাবো, খাওয়াবো, যেমন যেমন দরকার সব করব। তার বেশি কিছু নয। কী হবে কবে ? শীতল কিছু বলে নাই। কী বলিবে ? শ্যামা আবার বলিয়াছে, সেবার আমার দোষেই তো গেল। শীতল একটু ভাবিয়া বলিয়াছে, এটার কিন্তু পায় আছে শ্যামা। হতে না হতে কমল প্রেসের চাকরিটা (? Fix । বোলো না বাবু ও সব। পয না ছাই। আগে বঁচুক । কিন্তু কথাটা তুচ্ছ করিবার মতো নয়। পয়মন্ত ছেলে ? হয়তো তাই। সব অকল্যাণ ও নিরানন্দের অন্ত করিতে আসিয়াছে হয়তো। শ্যামা হয়তো আর দুঃখ পাইবে না। এরা সময় মতো মাইনে দেবে ?