পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in দিবারাত্রির কাব্য さ(r> গরমে, আগুনের তাতে, সুপ্রিয়া এতক্ষণে ঘোমে উঠেছে। উঠোনে চনচনে বোদ। একটু বাতাস বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। দুজনের মাঝে উঠানের ব্যবধান ভরে বঁাজালো কড়া রোদটা সুপ্রিয়ার কাছে বুপকের মতো ঠেকল। বারান্দা থেকেই হেরম্ব বলল, এত গরমে তোর না রাঁধলেও চলবে, সুপ্রিয়া। পাঁড়েকে ছেড়ে দিয়ে চলে আয়, যা পারে ওই কববে। সুপ্রিয়া কথা বলল না। আঁচলে মুখ মুছে নীরবে দাঁড়িয়ে বইল। হেরােন্স বলল, আমাকে চা দিলি না যে ? এত গরমে একশোবার চা খেতে হবে না । এক গেলাস জল দে। তবে । হেবম্বকে তৃষ্ণার্ত জেনে সুপ্রিয়ার সেবাবৃত্তি জাগ্রত হয়ে উঠল। শরবত করে দেব? লেবুর শরবত ? হেরম্ব আগ্রহ জানিয়ে বলল, দে, তাই দে। আহত, উত্তপ্ত ও ঘর্মািক্ত সুপ্রিয়ার হাত থেকে শরবতের গ্লাস নেবার সময় এক মুহুর্তের জন্য হেরম্বের মনে হ’ল হয়তো সত্যসত্যই মেয়েদের মণ্ডগলের ব্যবস্থা করতে গিয়ে পুরুষেরা গোডাতেই কোথাও একটা গলদ বাধিয়ে বসে আছে, যে জন্য ওদের মনের শৈশব কোনোদিনই ঘুচিতে চায় না। ঘুণ যদি ধরে তো একেবারে কঁচা মনেই ধবে, নইলে ওরা আজন্ম শিশু। জীবন-সাগরের তীবে বালি খুঁড়ে পুকুব তৈবি কবে ওরা খুশি থাকবে, সমুদ্রের সঙ্গে তাদেব সে কীর্তিব তুলনা কখনও করবে না। ডাবেব জলে ডাবের শাঁসে জগতেব ক্ষুধা-তৃষ্ণা দূর হয় চিরদিন এই থাকত ওদের ধাবণা, জগতেব ক্ষুধাও ওরা বুঝবে না, তৃষ্ণার প্রকৃতিও জানবে না। শববত পান করে হেরম্ব বলল, কাল ফিট হয়েছিল, আজ আবার রাঁধতে গেলি কেন ? বাডিতে অতিথি, রাধব না ? অতিথি খাবে কী ? অতিথি দাইচিড়ে দিয়ে ফলার করবে। অতির্থিব অতি দাবাদ দেখিয়ে কাজ নেই। সুপ্রিয়ার মুখেব মেঘ আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছিল। সে ভাবতে আরম্ভ করেছিল যে, হেরম্ব খেয়ালি মানুষ, মনেব খেয়ালে ও যদি একটা অদ্ভুত কিছু করতে চায়, রাগ করে আর লাভ কী হবে ? যে উদ্দেশ্যে যে মনোভাব নিয়েই ও এসে থাক, সে বিনা প্ৰতিবাদে। ওকে গ্রহণ করবে। নিজেব সুখ-দুঃখ মান-অভিমানেব কথাটা একেবারেই ভাববে না। বড়ো ভাইয়ের মতো ও যদি তাকে শাসন করে, ছোটো বোনের মতো সে নীরবে শাসিত হবে। ভ্ৰান্ত কল্যাণকামীর মতো ও যদি তার মনে ব্যথা দেয়, মুখ বুজে সে ব্যথিত হবে। ও যদি তার চোখের জল দেখতে চায় দুচোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল ঢেলে ওকে সে চােখের জল দেখাবে। স্বপ্নহীন মাধুর্যহীন বুঢ় বাস্তবতার মধ্যে তাকে যদি আকণ্ঠ নিমজিত দেখতে চায়, পাকা গিন্নির মতো ব্যবহার করে ওকে সে তাক লাগিয়ে দেবে। হেরম্বের নিদ্রালস প্রভাতটি অতঃপর সুপ্রিয়ার এই গোপন প্রতিজ্ঞার ফলাফলে ক্ষুব্ধ ও ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল। সহসা সুপ্রিয়া যেন তার কাছে একটা দুর্বোধ্য রহস্যের আবরণ নিয়েছে। বিদায়কামী কচের কাছে দেবযানীর অভিশাপের মতো সুপ্রিয়ার আকস্মিক ও অভিনব সহজ হাসিখুশির ভাবটা হেরম্বের কাছে দুর্বলের বিশ্ৰী প্রতিশোধ নেওয়ার মতো ঠেকতে লাগল। মনে হল, ইদারার জলের মতো ঠান্ডা মেয়েটা হঠাৎ বরফ হয়ে গেছে। স্নিগ্ধতা দেখালে আরও জমাট বাঁধছে, উত্তাপে বিনা বাক্যব্যয়ে গলতে আরম্ভ করে দিচ্ছে। কিন্তু গ্ৰহণ করছে না কিছুই।