পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিবারাত্রির কাব্য

যাবেন ? সুপ্রিয়া এক মুহুর্তে উত্তেজিত হয়ে উঠল, --তলে উঠন, উঠে শিগগির তৈবি হলো নিন। আমি চট করে চা করে ফেলছি। উঠন না! হেরম্ব প্রশান্তভাবে শূন্যে রইল। উঠবাব তব কোনো তাড়াই আর দেখা গেল না। আলসেবি আড়ালে আশ্রফ নিয়ে স্তিমিত চোখে তাকিয়ে সে বলল, আলসেমি লাগছে, সুপ্রিয়া। সুপ্রিয়া ক্ষুন্ন হয়ে বলল, যাবেন বললেন যে ? যাব বললাম বটে। কিন্তু তারপব ভেবে দেখলাম, ঝাউগাছ দূর থেকেই ভালো দেখায। অন্যদিকে চলুন তবে ? চলুন দুজনে মাঠে খানিকটা হেঁটে আসি। যাবেন বলেছেন যখন, আপনাকে যেতে হবেই হোবাম্ববাবু। উঠন। দশ গোনার মধ্যে না উঠলে হাত ধরে টেনে তুলে দেব। হাত ধরে টেনে তোলাব ইচ্ছাটা সুপ্রিয়ার আকস্মিক নয, হাত ধবে টেনে তোেলবার সুযোগটা হেব্বস্ব তাকে দেবে এ আশাও সুপ্রিয়া করছিল। রহস্যের ছলে এ তো তুচ্ছ, সামান্য দান ! কিন্তু এটুকু বুঝবার মতো নিবিড় মনোযোগ সুপ্রিযর প্রতি হেরম্ব বজায় রাখতে পারেনি। সুপ্রিয়াব কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই সে বিছানায় উঠে বসল। সুপ্রিয়াকে চেষ্টা করে চোখেব জল নিবাবণ করতে হল। তার যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে পদে পদে ব্যথা না পেঘে তাব উপায় ছিল না। গোধূলি-লগ্নে নির্জন তরঙ্গাযিত প্রান্তবে তাব সঙ্গে পাশাপাশি বেড়াতে যাওযা হেরম্বেব কাম নয় সন্দেহ করে, কাম্য হলেও একটা তুচ্ছ খেয়ালের বশে বেড়াতে যাওয়াব উৎস৷৩ - ১:ত্যসত্যই দমন করে ফেলেছে নিশ্চিত জেনে, সুপ্রিযা কম আহত হযনি। তবু, হৃদযকে হেবঙ্গ জোব করে নিয়ন্ত্রিত কলছে এই ধাবণ সুপ্রিয়াকে সান্তনা দিচ্ছিল। কিন্তু সে যে ছুতো কবে হেরম্বেব হাও ধরে টেনে তুলতে চায। এটা হেব্বস্ব খেয়াল পর্যন্ত করতে পাবল না দেখে নিজেকে তাৰ অপমানিত ও অবহেলিত, মনে হতে লাগল। সে যেন বুঝতে পারলা, হেরম্বেব মন থেকে সে মিলিয়ে গেছে। একটা কর্তব্য-বুদ্ধিব, একটা মোটা সাংসাবিক প্রতিকাব্যস্পপুহার আশ্রয় ছাড়া হেবম্বের কোনো মনোবৃত্তিই আবে তাকে নিযে ব্যাপুত হয়ে নেই। শেষ পর্যন্ত মাঠে হেবৰ্ম্ম তাকে বেড়াতে নিয়ে গেল, কিন্তু বেড়ানো উপভোগ করাব ক্ষমতা সুপ্রিয়ার আবি ছিল না। সমস্ত দুপুরটা প্রকৃতির গ্ৰীষ্ম আবি উনানের ধোঁযা সহ্য কবে সে কল্পনার জাল বুনেছে। ভেবেছে, পথের গ্লানি কেটে গেলে বিকালে শত অনিচ্ছাতেও নিজেকে ও প্রকাশ না কবে পারবে না। নিজেব অজ্ঞাতেই ও কত কথা বলবে, কত ভুল কববে, কত সময। অন্যমনে৷ আমাব দিকে চাইবে। ও টেবও পাবে না। ওর কোন কথাটি কুডিযে, কোন ভুলটি ধবে, কোন চাউনির মানে বুঝে ওকে আমি চিনে ফেলেছি। সুপ্রিয়া আবও ভেবেছে, আমি এখন বডো হযেছি। পাঁচ বছর ধবে ভেবে ভেবে আমি বুঝতে পেরেছি। পৃথিবীতে একটা ব্যাপাব হয় না। বেশ মোটা কবে ভালোবাসা বুঝিয়ে না দিলে— সারা দুপুব সুপ্রিয়া এই কথা ভেবেছে। ভেবেছে আমাব এই শরীবটা এত সুন্দব নয় যে শুধু চোখে দেখার সান্নিধ্যে কেউ খুশি হয়। ওর মনের বাজে খেয়ালটা নষ্ট করে দিতে হলে আমাকে লজ্জা একটু কমাতে হবে। ওর কী, কাল চলে গেলে মস্ত একটা ত্যাগ করার গৌরব নিয়েই বাকি জীবনটা দিব্যি কাটিয়ে দেবে। সর্বনাশ! আমাস্ত্ৰ । কাব্য নিয়ে থাকলে আমব চলবে কেন ? আমি যে একটা দিনের জন্য সুখ পেলাম না, সাংবাদিন আমার যে কিছু ভালো লাগে না, কিছুই ভালো লাগে না কাল ও জন্মের মতো চলে গেলে বেঁচে থেকে আমি কী করব ? এতদিন আশায় আশায় কাটিয়েও যে কষ্টটা আমি পেয়েছি, ও তার কী বুঝবে! ছাই সংসার, ছাই ভালোমন্দ! ছাই আমােব মঙ্গল অমঙ্গল! একজনের আদর্শন সইতে না পেরে আমার যদি শুধু অসহ্য যন্ত্রণাই হতে থাকে,