পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in SVO মানিক রচনাসমগ্ৰ শুয়ে থাকলি না কেন, সুপ্রিয়া ? কেন উঠে এলি ? সকালে চলে যাবেন, কয়েকটা কথা আপনাকে বলতে চাই। দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে, হেরম্ববাবু। হেরম্ব চুপ করে থাকে। মাথা ঘুরে হয়তো আবার আমি ফিট হয়ে পড়ে যাব। সবাই উঠে আসবে। বলুন কিছু, বলুন যা হােক কিছু। তুই তো চিরদিন লক্ষ্মী মেয়ে ছিলি সুপ্রিয়া। এত অবাধ্য এত দুরন্ত কবে থেকে হলি ? সুপ্রিয়াকে অন্ধকারেও দেখা যায়। কারণ, অন্ধকারে সে গাঢ়তর অন্ধকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার সত্যি দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে। হেরম্ব এবােবও চুপ করে থাকে। আপনি আমাকে ডাকলেই পারেন। আপনি বললেই বিছানায় উঠে বসতে পারি। হেরম্ব তবু চুপ কবে থাকে। কথা বলবার আগে সুপ্রিয়া এবার অপেক্ষা করে অনেকক্ষণ। আজ টের পেলাম, বউ কেন গলায় দড়ি দিয়েছিল। আপনি মেয়েমানুষের সর্বনাশ করেন। কিন্তু তাদের ভার ঘাড়ে নেবার সময় হলেই যান এড়িয়ে। কাল আমাকে সঙ্গে করে নিযে যেতে হবে বলে বিছানায় উঠে বসতে দিচ্ছেন না। আমি দাঁড়াতে পারছি না, তবু! হেরম্ব বলে, শোন সুপ্রিয়া। আজ তোর শরীর ভালো নেই, তাছাড়া নানা কারণে উত্তেজিত হয়ে আছিস। ধরতে গেলে আজ তুই রোগী, অসুস্থ মানুষ। আজ তুই যা চাইবি তই কি তোকে দেওয়া যায়। তবে আর জ্বরের সময় বোগীকে কুপথ্য দিলে দোয্য কি ছিল? বেশি ঝাল হয়েছিল বলে অশোককে তুই আজ মাছের ঝোল খেতে দিসনি মনে আছে? তুই আজ ঘুমিয়ে থাকিবি যা সুপ্রিয়া। ছ মাসের মধ্যে তোর সঙ্গে আমার দেখা হবে। তখন দুজনে মিলে পবামর্শ করে যা হয করব। আরও ছ। মাস ! ছ। মাস দেখতে দেখতে কেটে যাবে। ” যদি দেখা না হয় ? আমি যদি মরে যাই ? জীবনের দিগন্তে তাকে অস্তমিত রেখে সুপ্রিয়া মরতেও রাজি নয? হেরম্বের দ্বিধা হয়, সংশয়। হয়। জীবনকে কোনোমতেই পরিপূর্ণ করবার উপায় নেই। তবু সুপ্রিয়াকে জীবনের সঙ্গে গেথে ফেললে হয়তো চিরদিনের জন্য জীবন এত বেশি অপূর্ণ থাকবে যে, একদিন আপশোশ করতে হবে হেরম্বোব এই আশঙ্কা কমে আসে। তার মনে হয়, আজ একদিনে সুপ্রিয়া ক্ষণে ক্ষণে নিজের যে নব নব পরিচয় দিয়েছে হয়তো তা বহু সংযম, সাবধানতা ও কার্পণ্যের বাধা ঠেলেই বাইরে এসেছে। হয়তো পাঁচবছর ধরে সুপ্রিয়া যে ঐশ্বর্য সংগ্রহ করেছে তা অতুলনীয়, কল্পনাতীত। কিন্তু তবু হেরম্ব সাহস পায় নাই। নিজেকে দান করবার চেয়ে কঠিন কাজ জগতে কী আছে? অত বড়ো দাতা হবার সাহস হেরম্ব সহসী। • সংগ্রহ করে উঠতে পারে না। বলে, মরবি কেন, সুপ্রিয়া ? লক্ষ্মী মেয়ের মতো তুই বেঁচে থাকবি । সুপ্রিয়া চলে গেলে হেরম্ব শয্যা ত্যাগ করে। দরজা খুলে বাইরে যায়। থানার পাহারাদার বলে—কিধার যাতা বাবু? ঘুমানে যাতা। নিদ হোতা নেহি! আকাশ মেঘে ঢাকা। ওদিকে বিদ্যুৎ চমকায়। শুকনো ঘাসে-ঢাকা মাঠে হেরম্ব আস্তে আস্তে পায়চারি করে। আজ রাত্রে যদি বৃষ্টি হয় কাল হয়তো মাঠের বিবৰ্ণ বিশীর্ণ তৃণ প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।