পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in দিবারাত্রির কাব্য ՀԳ Գ আনন্দ বলল, প্ৰেম কতদিন বাঁচে ? হেরম্ব হেসে বলল কী করে বলব আনন্দ! দিন গুনে বলা যায় না। তবে বেশি দিন নয। একদিন, এক সপ্তাহ, বড়ো জোর একমাস। শুনে আনন্দ যেন ভীতা হয়ে উঠল। G | হেরম্ব আবার হেসে বলল, মোটে হল ? একমাসের বেশি প্রেম কারও সহ্য হয় ? মরে যাবে আনন্দ-—একমাসেব বেশি হ্রদয়ে প্রেমকে পুযে রাখতে হলে মানুষ মবে যাবে। মানুষ একদিন কি দুদিন মাতাল হয়ে থাকতে পাবে। জলের সঙ্গে মদের যে সম্পর্ক মদেব সঙ্গে প্রেমেব সম্পর্ক তাই--প্ৰেম এত তেজি নেশা । আনন্দ হঠাৎ কথা খুঁজে পেল না। মুখ থেকে সে চুলগুলো পিছনে ঠেলে দিল। ডান হাতের ছোটাে আঙুলটিল ডগা কামড়ে ধরে এক পায়ের আঙুল দিযে অন্য পায্যের নখ থেকে ধুলো মুছে দিতে লাগল। তার মনে প্রবল আঘাত লেগেছে বুঝে হেরম্ব দুঃখ বোধ করল। কিন্তু এ আঘাত না দিয়ে তার উপায় ছিল না। আনন্দের কাছে সত্য গোপন করাব ক্ষমতা তার নেই। তাছাড়া, প্রেম চিরকাল থেকে যত তাড়াতাড়ি এ বিশ্বাস দূর হয়ে যায় ততই মঙ্গল। আনন্দ হঠাৎ ও জ্ঞাসা করল, প্ৰেম মরে গেলে কী থাকে ? প্রেম ছাড়া আব্ব সব থাকে। সুখে শান্তিতে ঘবকান্না করবাব জন্য যা যা দরকার। তাছাড়া খোকা আগবা খুকি থাকে-আবও একটি প্রেমের সম্ভাবনা। ওরা তুচ্ছ নয়। কিন্তু প্রেম তো থাকে না। আসল জিনিসটাই তো মরে যায়! তাবপব মানুষের সুখ সম্ভব কী কবে ? সুখ হল শটকি মাছ-মানুষের জিভ হল আসলে ছোটােলোক। তাই কোনো রকমে সুখের স্বাদ দিযে জীবনটা ভাবে ব্যাখা যায়। জীবন বড়ো নীরস আনন্দ—বডো নিবুৎসব। জীবনেব। গতি শ্লথ, মন্থাব। ঝিমিযে ঝিমিযে মানুষকে জীবন কাটাতে হয়। তবে মধ্যে ওই প্রেমেব উত্তেজনাটুকু তার উপবি crife || সুখ হ’ল— ? শটকি মাছ। আগে যেন কার কাছে কথাটা শুনেছি। তোমার মা খানিক আগে আমাকে বোঝাচ্ছিলেন। হঁ্যা, মা-ই বলছিল বটে। কিন্তু আপনি এমন সব কথা বলছেন যা শুনলে কান্না আসে। হেরম্ব একটি পা একধাপ নীচে নামিয়ে বলল, কান্না এলে চলবে না। আনন্দ, হাসতে হবে। বুক কঁাপিয়ে যে দীর্ঘশ্বাস উঠবে তার সবটুকু বাতাস হাসি আব গানে পবিণত করে দিতে হবে। মানুষের যদি কোনো ধর্ম থাকে, কোনো তপস্যার প্রয়োজন থাকে, সে ধর্ম এই সে তপস্যা এই। মানুষ কী করবে বল ? পঞ্চাশ ষাট বছর তাকে বাঁচতে হবে অথচ তাল জীবনে কাজ নেই। কােজ নেই ? কোথায় কাজ ? কী কাজ আছে মানুষের ? অঙ্ক সৃষিা, ইঞ্জিন বানানো, কবিতা লেখা ? ও সব তো ভান, কাজের ছল। পৃথিবীতে কেউ ও সব চায় না। একদিন মানুষের জ্ঞান ছিল না, বিজ্ঞান ছিল না, সভ্যতা ছিল না, মানুষের কিছু এসে যায়নি। আজ মানুষের ও সব আছে কিন্তু তাতেও কারও কিছু এসে যায় না। কিন্তু মানুষ নিরুপায়। তার মধ্যে যে বিপুল শূন্যতা আছে সেটা তাকে ভবতেই হবে। মানুষ তাই জটিল অঙ্ক দিয়ে, কায়দাদুরস্ত ভালো ভালো ভাব দিয়ে, ইস্পাতের টুকরো দিয়ে, আরও সব হাজার রকম জঞ্জাল দিয়ে সেই ফাকটা ভরতে চেষ্টা করে। পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে