পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in দিবারাত্রির কাব্য ՀԵ՞Տ বোঝা যাচ্ছে দেবতাকে তুমি ভক্তি কর না। ভক্তি করা উচিত নয়। বাবা বলেন, বেশি ভক্তি করলে দেবতা চটে যান। দেবতা কি বলেন, শুনবেন ? বলেন, ওরে হতভাগার দল! আমাকে নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তোরা একটু আত্মচিন্তা কর তো বাপু । আমাকে নিযে পাগল হয়ে থাকবার জন্য তোদের আমি পুথিবীতে পাঠাইনি। সবাই মিলে তোরা আমাকে এমন লজা দিস! হেরম্ব খুশি হয়ে বলল, তুমি তো বেশ বলতে পাব আনন্দ ? আমি বলতে পাবি ছাই। এ সব বাবার কথা । তোমার বাবা বুঝি খুব আত্মচিন্তা করেন ? দিনরাত। বাবার আত্মচিন্তার কামাই নেই। আপনার সঙেগ দেখা হওয়ায় আজ বোধ হয় মন একটু বিচলিত হয়েছিল, এসেই আসনে বসেছেন। কখন উঠবেন তার ঠিক নেই। এক একদিন সারারাত আসনে বসেই কাটিয়ে দেন। মন্দিরের মধ্যে মালতী শুনতে পাবে বলে আনন্দ হেরম্বের দিকে কুঁকে পড়ল। এই জন্য মা এত ঝগড়া করে। বলে বাড়ি বসে ধ্যান করা কেন, বনে গেলেই হয়। বাবা সত্যি সত্যি দিনেব পৰা দিন যেন কী রকম হয়ে যাচ্ছেন। এত কম কথা বলেন যে, মনে হয় বোবাই বুঝি হবেন । হেরম্ব এ কে ; জানে। অনাথ চিরদিন স্বল্পভাষী। সে বকম স্বল্পভাষী নয়, বেশি কথা কইলে দুর্বলতা ধরা পড়ে যাবে বলে যারা চুপ করে থাকে। নিজেকে প্রকাশ করতে অনাথের ভালো লাগে না। তাব কম কথা বলার কারণ তাই। মন্দিরের মধ্যে পঞ্চপ্রদীপ নেড়ে টুং টাং ঘণ্টা বাজিয়ে মালতী৷ এদিকে আরতি আরম্ভ করে দিয়েছিল। হেরম্ব বলল, প্ৰণামি দেবার ভক্ত কই আনন্দ ? তাবা সকালে আসে। দুমাইল হেঁটে রাত করে কে এতদূরে আসবে! বিকালে আমাদের একটি পযসা রোজগাব নেই। আজ আপনি আছেন। আপনি যদি কিছু দেন। তুমি আমার কাছে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছি। আমি আদায় করব কেন ? পুণ্য অর্জনের জন্য আপনি নিজেই দেবেন। আমি শুধু আপনাকে উপায়টা বাতলে দিলাম। আনন্দ হাসল। মালতীর ঘণ্টা এই সময় নীরব হওয়ায় আবাব হেরম্বের দিকে ঝুঁকে বলল, তাই বলে মা প্ৰণাম করতে ডাকলে প্ৰণামি দিয়ে বসবেন না যেন সত্যি সত্যি। মা তাহলে ভয়ানক রেগে যাবে। মাকে তুমি খুব ভয় কর নাকি আনন্দ ? না, মাকে ভয় কবি না। মার রাগকে ভয় করি। হেরম্ব এক টিপ নস্য নিল। সহজ। আলাপের মধ্যে তার আত্মগ্লানি কমে গেছে। আমাকে ? আমাকে তুমি ভয় কব না আনন্দ ? আপনাকে ? আপনাকে আমি চিনি না, আপনার রাগ কী রকম জানি না। কাজেই বলতে পারলাম না । আমাকে তুমি চেনো না আনন্দ! আমি তোমার বন্ধু যে! আনন্দ অতি মাত্রায় বিস্মিত হয়ে বলল, ব্যস! শোন কথা! আপনি আবার বন্ধু হলেন কখন ? একটু আগে তুমি নিজেই বলেছ। মালতী বাউদি সাক্ষী আছে। আনন্দ সঙ্গে সঙ্গে বলল, ভুল করে বলেছিলাম। আমি ছেলেমানুষ, আমার কথা ধরবেন না। কখন কী বলি-না-বলি ঠিক আছে কিছু?