পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in ՀԵ-8 মানিক রচনাসমগ্র আনন্দের নালিশ করবার পর থেকে বিনা পরামর্শের তাদের গলা নিচু হয়ে গিয়েছিল। নিজের কথা নিজের কানেই যেন শোনা চলবে না। হেরম্ব নয়, সে-ই যেন মিথ্যা কথা বলেছে এমনি ভাবে আনন্দ বলল, আপনি এমন বানিয়ে तुळजाऊ श्रीश ! আরতি শেষ করে আনন্দ আজ মন্দিরে নাচবে না। শুনে মালতী মন্দিরের দরজায় তালা দিল। এসে থেকে ঠিায় বসে আছ সিডিতে। ঘরে চলো হেব্বস্ব। তুই এই বেলা কিছু খেয়ে নে না আনন্দ ? বাড়ির দিকে চলতে আরম্ভ করে আনন্দ বলল, প্ৰসাদ খেলাম যে ? প্ৰসাদ আবার খাওয়া কি লো ষ্টুড়ি ? আর কিছু খা। নাচবেন বলে মেয়ে আমার খাবেন না, ভারী নাচনেউলি হয়েছেন। আনন্দ তাকে ভয় দেখিয়ে বলল, শোনো মা, শোনো! আজ যদি আমায় বক, সেদিনের মতো হবে কিন্তু। হেরম্ব দেখে বিস্মিত হল যে, এ কথায় মালতী সত্যসত্যই ভড়কে গেল। কে তোকে বকিছে। বাবু! শুধু বলেছি, কিছু খা! খেতে বলাও দোষ? হেরম্ব জিজ্ঞাসা করল, সেদিন কী হয়েছিল ? আনন্দ বলল, বোলো না মা । মালতী বলল, আমি একটু বকেছিলাম। বলেছিলাম, উপোস করে থাকলে নাচতে পারবি না। আনন্দ। এই শুধু বলেছি, আর কিছুই নয়। যেই বলা— আনন্দ বলল, যেই বলা! কতক্ষণ ধরে বকেছিলে মনে নেই বুঝি ? মালতী বলল, হ্যারে হ্যা, তোকে আমি সারাদিন ধরে শুধু বকেছি। খেয়ে-দোয়ে আমার আর কােজ নেই। তারপর মেয়ে আমার কি করল জান হেরম্ব ? কান্না আরম্ভ করে দিল। সে কী কান্না হেরম্ব, বাপের জন্মে। আমি অমন কান্না দেখিনি। কিছুতেই কি থামে? লুটিয়ে লুটিয়ে মেয়ে আমার কঁদিছে তো কঁদছেই। আমরা শোযে ভয় পেয়ে গেলাম। আমি আদব করি, উনি এসে কত বোঝান, মেয়ের কান্না। তবু থামে না। দুজনে আমরা হিমসিম খেয়ে গেলাম। হেরম্ব ফিসফিস করে মালতীকে জিজ্ঞাসা করল, আনন্দ পাগল নয় তো, মালতী বাউদি ? কী জানি। ওকেই জিজ্ঞেস করো। আনন্দ কিছুমাত্র লজ্জা পেযেছে বলে মনে হল না। সপ্রতিভভাবেই সে বলল, পাগল বইকী। আমি অভিনয় করেছিলাম, মজা দেখছিলাম। চোখ দিয়ে জলও অভিনয় করেই ফেলেছিলি, না রে আনন্দ ? চোখ দিয়ে জল ফেলা শক্ত নাকি! বল না, এখুনি মেঝেতে পুকুর করে দিচ্ছি! বসুন। এই চৌকিটাতে । হেরম্ব বসল। দুটি ঘরের মাঝখানে সরু ফ্ৰাক দিয়ে বাড়িতে ঢুকে অন্দরের বারান্দা হয়ে সে এই ঘরে পৌঁছেছে। বারান্দায় বোঝা গিয়েছিল, বাড়িটা লম্বাটে ও দুপোশে। লম্বা সারিতে বোধ হয় ঘর তিনখানা, অন্যপাশে একখানি মাত্র ঘর এবং তার সঙ্গে লাগানো নিচু একটা চালা। চালার নীচে দুটি আবছা গোর হেরম্বের চোখে পড়েছিল। বাড়ির আর দুটি দিক প্রাচীর ঘেরা। প্রাচীরের মাথা ডিঙিয়ে জ্যোৎস্নালোকে বনানীর মতো নিবিড় একটি বাগান দেখা যায়। এ ঘরখানা লম্বা সারির শেষে । হেরম্ব জিজ্ঞাসা করল, এটা কার ঘর ?