পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in দিবারাত্রির কাব্য SR bet& আনন্দ হাসল। বলল, অত বোকা নাই, বুঝলেন? এমনি করে আমার কথাটা এড়িযে যাবেন, তা হবে না। রোমিও জুলিয়েট বেঁচে থাকলে তাদের প্ৰেম অল্পদিনের মধ্যে মরে যেত, আপনি কী করে জানলেন বলুন। হেরম্ব এটা আশা করেনি। লজ্জা না কবার অভিনয করতে আনন্দের যে প্রাণান্ত হচ্ছে, এটুকু ধন্বতে না পারার মতো শিশুচোখ হেরম্বের নয়। এবাব মবিয়া হয়ে সে প্রশ্ন করছে, তাল সম্বন্ধে এই সুস্পষ্ট ব্যক্তিগত প্রশ্নটাি। তাব এ সাহস অতুলনীয়। কিন্তু প্রশ্নটা চাপা দিয়েও আনন্দেব সরম-তিক্ত অনুসন্ধিৎসাকে চাপা দেওয়া গেল না দেখে হেরম্ব অবাক হযে, বইল । বুদ্ধি দিযে জানলাম। হেরম্ব এই জবাব দিল। শুধু বুদ্ধি দিয়ে ? শুধু বুদ্ধি দিয়ে, আনন্দ! বিশ্লেষণ করে। আনন্দের বালিশ থেকে সদ্য-আবিষ্কৃত লম্বা চুলটির একপ্রান্ত আঙুলু দিয়ে চেপে ধরে যুঁ দিয়ে উড়িয়ে সেটিকে হেরান্স সোজা করে রাখল। জল খেয়ে আসি । বলে আনন্দ গেল পালিয়ে। হেরম্ব তখন আবার ভাবতে আরম্ভ করল যে কোন অজ্ঞাত সত্যকে আবিষ্কার করতে পাবলে তার হ্রদায়ের চিরন্তন পরাজয়, জয়-পরাজয়ের স্তরচু্যত হয়ে সকল পার্থিব ও অপার্থিব হিসাবনিকাশেব অতীত হয়ে যেতে পারে। চোখ দিযে দেখে, স্পর্শ দিয়ে অনুভব কবে, বুদ্ধি দিয়ে চিনে ও হৃদয় দিয়ে কামনা করে, মর্ত্যলোকের যে-আত্মীয়তা আনন্দের সঙ্গে তাব স্থাপিত হওয়া সম্ভব, আত্মাব অতীন্দ্ৰিয উদাত্ত আত্মীয়তাব সঙ্গে তাব তুলনা কোথায রহিত হয়ে গেছে। কোন কুদ্য যুক্তি, সীমাবেখ্যার মতো, এই দুটি মহাসত্যকে এমন ভাবে ভাগ করে দিয়েছে যে, তাদেব অস্তিত্ব আর পরস্পর-বিবোধী হয়ে নেই, তাদেব একটি অপরটিকে কলঙ্কিত করে দেয়নি। আনন্দেব ফিরে আসতে দেরি হয়। হেরম্বের ব্যাকুল অন্বেষণ তাব দেহকে অস্থির কবে দেয়। বিছানা থেকে নেমে সে ঘরের মধ্যে পাযচরি৷ আরম্ভ করে। এদিকের দেয়াল থেকে ওদিকেবা দেয়াল পর্যন্ত হেঁটে যায়, থমকে দাঁড়ায এবং প্রত্যাবর্তন করে। তিনটি খোলা জানালো প্রত্যেকবার তার চোখের সামনে জোৎস্নাপ্রাবিত পৃথিবীকে মেলে ধরে। কিন্তু হেবম্বেব এখন উপেক্ষ অসীম। সম্মুখেব সুদূব সাদা দেয়ালটির আধ হাতেব মধ্যে এসে গতিবেগ সংযত কবে, আব্ব কিছুই দেখতে পায় না। মেঝেতে আনন্দেব পরিত্যক্ত একটি ফুল তার পায্যের চাপে পিয়ে যায়। হেরম্ব জানে, আলো এই অন্ধকাবে জ্বলবে। তাকে চমকে না দিয়ে বিনা আড়ম্বরে তাব হৃদয়ে পরম সত্যটির আবির্ভাব হবে। তাব সমস্ত অধীরতা অপমৃত্য লাভ কববে না, ঘুমিযে পড়বে জীবনের চরম জ্ঞানকে সুলভ ও সহজ বলে জেনে সে তখন ক্ষুন্ন অথবা বিস্মিত পর্যন্ত হবে না। কিন্তু তাব দেরি কত ? ফিরে এসে তার চাঞ্চল্য লক্ষ করে আনন্দ অবাক হয়ে গেল। কিন্তু কথা বলল না। বিছানার একপাশে বসে তার অস্থির পদচারণাকে দৃষ্টি দিয়ে অনুসরণ করতে লাগল। হেপ্টম্ব বহুদিন হল তাব চুলের যত্ন নিতে ভুলে গেছে। তবু তার চুলে এতক্ষণ যেন একটা শৃঙ্খলা ছিল। এখন তাও নেই। তাকে পাগলের মতো চিন্তাশীল দেখাচ্ছে। আনন্দের সামনে এমনিভাবে সে যেন কত যুগ ধরে খ্যাপার মতো অসংলগ্ন পদবিক্ষেপে তেঁটে হেঁটে শুধু ভেবে গিযেছে। পৃথিবীতে বাস করার অভ্যাস যেন তার নেই। প্রবাসে আপনার অনির্বচনীয় একাকিত্বের বেদনায় এমনি প্রগাঢ় ঔৎসুক্যের সঙ্গে সে সর্বদা স্বদেশের স্বপ্ন দেখে । আনন্দের আবির্ভাব হেরম্ব টের পেয়েছিল। কিন্তু সে যে মানসিক অবস্থায় ছিল তাতে এই আবির্ভাব কিছুক্ষণের জন্য মূল্যহীন হয়ে থাকতে বাধ্য। মানিক ১ম-১৯