পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী SS সারাদিন পবে বিকালে ব্যাপার বুঝিয়া মন্দা স্বামীকে বলিল, তুমি কী গো ? বউ কতবার ছেলে কোলে কাছে এল, একবার তাকিযে দেখলে না ? রাখাল বলিল, দেখলাম না ? ওই যে বললাম তুমি রোগ হয়ে গেছ বউঠান ? মন্দা বলিল, দাদার ছেলে হযেছে জানো ? জানো আমার মাথা! ছেলেকে একবার কোলে নিয়ে একটু আদব কবতে পারলে না ? দাদা কী ভাববে! রাখাল বলিল, তোমায়। আদব করে সময় পেলাম কই ? মন্দা বাগ কবিয়া বলিল, না বাবু, তোমাব কী যেন হয়েছে। তামাশাগুলি পর্যন্ত আজকাল রসালো হয় না। তোমাৰ কাছে হত্য না। বউঠানকে ডেকে আনো তবে। মন্দার অনুযোগেব যে ফল ফলিল শ্যামাব তাহাতে মনে হইল একটু গাল টিপিয়া আদর করিয়া রাখাল বুঝি ছেলেকে তাহার অপমান করিয়াছে। শ্যামার মনে অসন্তোষের সৃষ্টি হইয়া রহিল। জীবনযুদ্ধে সন্তানের প্রত্যেকটি পরাজয়ে মার মনে যে ক্ষুব্ধ বেদনার সঞ্চাব হয়, এ অসন্তোষ তাঁহারই অনুরূপ। শ্যামার ছেলে এই প্রথমবার হার মানিয়াছে। পবদিন বিকালে বাখাল একই ফিবিয়া গেল। মন্দা যাইতে রাজি হইল না, রাখালও বেশি। পীড়াপীডি কবলি না। যাওয়ার কথা মন্দাকে সে একবারেব বেশি দুবার বলিল কিনা সন্দেহ। পথ ভুলিয়া আসার মতো যেমন অন্যমনে সে আসি যাছিল, তেমনই অন্যমনে চলিয়া গেল। কী জনা আসি যাছিল তাও যেন ভালোবকম বোঝা গেল না। শীতল গোপনে শামাকে বলিল, বাখাল আবাব বিয়ে করেছে শ্যামা। বলিল রাত্রে, শ্যামাব যখন ঘুম আসিতেছে। শ্যাম, সজাগ হইয়া বলিল, কেন ঠাট্টা করছি ? কীসেব ঠাট্টা ? ও মাসেব সাতাশে বিযে হযেছে। মন্দাকে এখন কিছু বোলো না। রাখাল বলে গেছে, সেই গিয়ে সব কথা খুলে ওকে চিঠি লিখবো। মুখে বলতে এসেছিল, পাবল না। আমিও ভেৰে দেখলাম, চিঠি লিখে জানানোই ভালো । উত্তেজনার সময। শ্যামাব মুখে কথা জোগায, না ; রাখালের ভাবভঙ্গি মনে করি যা সে আরও মূক হইযঃ বহিল। একদিন যে তাহার পবমাস্ত্রীয্যের চেয়ে আপন হইয়া উঠিয়ছিল, গভীর রাত্রে বারান্দায টিমটিমে আলোয় যাব। কাছে বসিয়া দুঃখেব কথা বলিতে বলিতে সে নিঃসংকোচে চোখ মুছিতে পাবিত,--শুধু তাই নয, যে চঞ্চল হইযা উশাখুশ কবিতে আরম্ভ করিলেও যার কাছে তাহার ভয় ছিল না, এবার সে তাহাব কাছে ঘেঁষিতে পারে না। একটা কিছু করিয়া না আসিলে কি মানুষ এমন হয় ? কোথায বিযে হল কী বৃত্তান্ত বলে তো আমায়, গুছিয়ে বলো।--শ্যামা যখন এ অনুরোধ জানাইল, শীতলের চোখ ঘুমে বুজিয়া আসিযাছে। অ ? বলিয়া সজাগ হইয়া সে যা জানিত গড়গড কবিয়া বলিয়া গেল। তারপর বলিল, বড়ো ঘুম পাচ্ছে গো। বাকি সব জিজ্ঞেস কোরো কাল। জিজ্ঞাসা করিবার কিছু বাকি ছিল না, এবার শুধু আলোচনা। শ্যামার সে উৎসাহ ছিল না, সে জাগিয়া শুইয়া রহিল নীরবে। এ কী আশ্চর্য ব্যাপার যে রাখাল আবার বিবাহ করিয়াছে ? স্ত্রী যে তাহার তিনটি সন্তানের জননী এ কি সে ভুলিয়া গিয়াছিল ? অবস্থা বিশেষে পুরুষমানুষের দুবার বিবাহ করাটা শ্যামার কাছে অপরাধ নয়। ধরো, এখন পর্যন্ত তার যদি ছেলে না হইত, শীতল আবার বিবাহ করিলে তাহা একেবারেই অসংগত হইত না। কিন্তু এখন কি শীতল আর একটা বিবাহ করিতে পারে? কোন যুক্তিতে করিবে!--রাখাল এ কী কাণ্ড করিয়া বসিয়াছে? মন্দার কাছে সে মুখ দেখাইবে কী করিয়া ? রাখালকে শ্যামা চিরকাল শ্ৰদ্ধা করিয়াছে, কোনোদিন বুঝিতে পারে নাই। এবারও রাখালের এই কীর্তির