পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in দিবারাত্রির কাব্য NSVSð হেব্বস্ব ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। অনাথের ঘরের সামনে দিয়ে যাবার সময় ভেজানো জানালার ফাক দিয়ে সে দেখতে পেল এককোণে মেরুদণ্ড টান করে নিস্পন্দ হয়ে সে বসে আছে। জীবনে বাহুল্যের প্রয়োজন আছে। কত বিচিত্র উপাযে মানুষ এ প্রযোজন মেটায়! বাড়ির বাইরে গিয়ে মন্দিরের সামনে ফাঁকা জায়গায় হেরম্ব দাঁড়াল। ইতিমধ্যে এখানে অনেক পরিবর্তন সংঘটিত হয়ে গেছে। তা যদি না হয়ে থাকে, তবে হেরম্বের চোখেরই পরিবর্তন হয়েছে নিশ্চয়। মন্দিব ও বাড়ির শ্যাওলার আবরণ এক প্রস্থ ছায়ার আস্তরণের মতো দেখাচ্ছে। বাগানে তরুতলেব রহস্য আরও ঘন আরও মর্মস্পশী হয়ে উঠেছে। আনন্দ যে ঘাসেব জমিতে নাচবে সেখানে জ্যোৎস্না পড়েছে আর পড়েছে দেবদার গাছটার ছায়া। সমুদ্রের কলরব ক্ষীণভাবে শোনা যাচ্ছে। রাত্রি আবও বাড়লে, চারিদিক আরও স্তব্ধ হয়ে এলে, আরও স্পষ্টভাবে শোনা যাবে। পৃথিবীতে চিরদিন এই সংকেত ও সংগীত ছিল, চিবদিন থাকবে। মাঝখানে শুধু কয়েকটা বছরের জন্য নিজেকে সে উদাসীন করে রেখেছিল। সে মরেনি, ঘুমিযে পড়েছিল মাত্র। ঘুম ভেঙে, দুঃস্বপ্নের ভগ্নস্তৃপকে অতিক্রম করে সে আবার স্তবে স্তরে সাজানো সুন্দর রহস্যময় জীবনের দেখা পেয়েছে। যে স্পন্দিত বেদনা প্রাণ ও চেতনার একমাত্র পবিচয় আজ আর হেরম্বের তার কোনো অভাব নেই। হেব্বস্ব মন্দিরেব সিডিতে বসল। আনন্দের প্রতীক্ষায় অধীর হয়ে বাড়ির দরজায় সে চোখ পেতে রাখল না। আনন্দ বেশ পরিবর্তন করেই বাইরে এসে তাকে নাচ দেখাবে, চঞ্চল হয়ে ওঠাব কোনো কারণ নেই। এই সংক্ষিপ্ত বিরহাটুকু তার বরং ভালোই লাগছে। আনন্দ যদি আসতে দেরিও করে সে ক্ষুন্ন হবে না। আনন্দ দেরি না করেই এল। চাঁদেব আলোয় তালে. পরীক্ষা কবে দেখে হেরম্ব বলল, তুমি তো কাপড় বদলাও নি আনন্দ ? না। শুধু জামা বদলে এলাম। কাপড়ও অন্যবকম করে পরেছি, বুঝতে পারছেন না ? বুঝতে পারছি। কী রকম দেখাচ্ছে আমাকে ? তা কি বলা যায আনন্দ ? হেরম্ব সিডির উপরের ধাপে বসেছিল। তার পায়ের নীচে সকলের তলাব ধাপে আনন্দ বসতেই সেও নেমে এল। আনন্দ চেয়ে না দেখেই একটু হাসল। হেরম্ব কোনো কথা বলল না। আনন্দের এখন নীরবতা দবকার এটা সে অনুমান করেছিল। হাঁটুর সামনে দুটি হাতকে বেঁধে আনন্দ বসেছে। তার ছড়ানো বাবরি চুল কান ঢেকে গাল পর্যন্ত ঘিবে আসছে। তার ছোটো ছোটো নিশ্বাস নেবার প্রক্রিয়া চোখে দেখা যায়। আনন্দ এক সময়ে নিশ্বাস ফেলে বলে, জামা-কাপড! কী ছোটো মন আমাদেব! আমাদের, আনন্দ । না, আমাদের। এ সব সৃষ্টি করেছি। আমরা। এ, আমাদের এক ধরনের ছল। নিঃশব্দে সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। তারা চুপ করে বসে থাকে। আনন্দকে চমকে দেবার ভয়ে হেরম্ব নড়তে সাহস পায় না ; জোরে নিশ্বাস ফেলতে গিয়ে চেপে যায়। আকাশে চাঁদ গতিহীন। আনন্দের নাচের প্রতীক্ষায় হেরম্বের মনেও সমস্ত জগৎ স্তব্ধ হয়ে গেছে। তারপর এক সময় আনন্দ উঠে গেল। ঘাসে-ঢাকা জমিতে গিয়ে চাদের দিকে মুখ করে সে