পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in দিবারাত্রির কাব্য VSDOS আনন্দেব বিষগ্নতাব সমগ্র ইতিহাস এইটুকু। হয়তো এর বিশদ ব্যাখ্যা ছিল ; কিন্তু আজও, এক পূর্ণিমা থেকে আরেক অমাবস্যা পর্যন্ত আনন্দের হৃদয়ে অতিথি হয়ে বাস কবার পরেও, বিশ্লেষণে যা ধরা পড়ে না, শুধু অনুমান দিযে আবিষ্কার করে তাকে গ্ৰহণ কৰাব শক্তি হেরম্বের জন্মায়নি। আনন্দের মুখ দেখে হেরম্ব ছাড়া আব্ব সকলের সন্দেহ হবার সম্ভাবনা আছে যে আনন্দের দাঁত কনকন করছে। চন্দনটা তুমিই ঘষে নাও, আনন্দ-বলে হেরম্ব মন্দির ছেড়ে চলে এল। বহুদিন আগে একবাব এক বর্ষণ ক্ষান্ত নিশীথ স্তব্ধতায় সজল বায়ুস্তর ভেদ করে হেবম্বেব কলকাতাব বাড়িতে বিনামেঘে। বজাঘাত হয়েছিল! স্ত্রীর ভয় তারও মনে সংক্ৰমিত হওয়াতে বাকি রাতটা হেব্বস্ব আতঙ্কে ঘুমাতে পাবেনি। আজ কিছুক্ষণেব জন্য তার অবিকলে সেই বকম ভয় করতে লাগল। ঘরে গিয়ে হেরম্ব বিছানায আশ্রয় নিল। বারান্দা দিয়ে যাবার সময় দেখে গেল, অনাথ তার ঘরে ধ্যানস্থ হয়েছে। তার নিস্পন্দ দেহের দিকে এক নজর তাকালেই বোঝা যায়, বাহ্যজ্ঞান নেই। অনাথের সুদীর্ঘ সাধনা হেরম্ব দেখেনি, এত দ্রুত তাকে সমাধিস্থ হতে দেখে তার বিস্ময়ের সীমা থাকে না। আনন্দের কাছে সে শুনেছে, গত বৎসরও অনাথের এ ক্ষমতা ছিল না। মাস চারেক আগে অনাথ একবার মাথাব্য যন্ত্রণায় কদিন পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল, তারপর থেকে আসনে বসলেই সে সমাধি পায়। জীব;ে মৃত্যু-২, স্বাদ ভোগ করবাব শখ হেবম্বের কোনোদিন ছিল না, এ বিষয়ে কৌতুহলও তার নেই। বিছানায় চিত হযে সে ঘুমেরই তপস্যা আরম্ভ করল। আনন্দ যখন ঘরে এল ঘুমের আশা সে ত্যাগ করেছে, কিন্তু চোখ মেলেনি। আনন্দ জিজ্ঞাসা কবল, ঘুমিয়েছ ? a চন্দন ঘয়ে দিলে না যে ? হেব্বস্ব উঠে বসল। বলল ও সব আমি পারি না। আমাদেব সংসাব হলে তুমি যে বলবে এটা কবি ওটা কব তা চলবে না, আনন্দ । আলসেমিকে আমি প্রায় তোমাৰ সমান ভালোবাসি। ভালোবাসো নাকি আমাকে ? আনন্দের কণ্ঠস্বর হেরম্বকে চমকে দিল। সহজ ও সবল প্রশ্ন নয়। উচ্চারণের পর মরে যায না এমন সব কথা আনন্দ আজকাল এমনি অবহেলার সঙ্গে বলে। হেবম্বের মনশচক্ষে যে ছানি পড়তে আরম্ভ কবেছিল চোখেব পালকে তা স্বচ্ছ হয়ে গেল। আনন্দের মুখ দেখে সে বুঝতে পারল শুধু বিষগ্নতা নয়, সেই প্রথম বাত্রিতে চন্দ্ৰকলা নাচ শেষ কবার পর আনন্দের যে যন্ত্রণা হয়েছিল। তেমনি একটি কষ্ট সে জোর কবে চেপে রাখছে। হেরম্ব সািভয়ে জিজ্ঞাসা করল, এ কথা বলছ কেন, আনন্দ ? আমার কদিন থেকে এ রকম মনে হচ্ছে যে । আগে বলনি কেন ? মনে এলেই বুঝি সব কথা বলা যায়? আগে বলিনি, এখন তো বলছি। তুমি বলেছিলে ভালোবাসা বেশি দিন বঁাচে না। আমাদের ভালোবাসা কি মরে যাচ্ছে ? হেৰম্ব জোর দিয়ে বলল, তা যাচ্ছে না, আনন্দ। আমাদের ভালোবাসা কি বেশি দিনেব যে মরে যাবে? এখনও যে ভালো করে আরম্ভই হয়নি? আনন্দ হতাশার সুরে বলল, আমি কিছুই বুঝতে পারি না। সব হেঁয়ালির মতো লাগে। তুমি, আমি, আমাদের ভালোবাসা, সব মিথ্যে মনে হয়। আচ্ছা আমাদের ভালোবাসাকে অনেকদিন, খুব অনেকদিন বাঁচিয়ে রাখা যায় না ? হেরম্ব একবার ভােবল মিথ্যে বলে আনন্দকে সাস্তুনা দেয়। কিন্তু সত্য, মিথ্যা কোনাে সাত্মনাই